বিজ্ঞাপন

পাহাড় রক্ষায় ‘পরিবেশ পুলিশ ইউনিট’ গঠনের দাবি

June 11, 2023 | 8:50 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৬ বছর আগে চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, যেসব সরকারি সংস্থার পাহাড় কাটা প্রতিরোধের দায়িত্ব, তারাই চট্টগ্রামে পাহাড় কাটছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে পাহাড় কাটা থামছে না। এছাড়া পাহাড়সহ প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় পুলিশ বাহিনীতে ‘পরিবেশ পুলিশ ইউনিট’ গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১১ জুন) বিকেলে নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করে পিপল’র ভয়েস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

সমাবেশে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি জসিম চৌধুরী সবুজ বলেন, ‘চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদফতরের ভবন হয়েছে পাহাড় কেটে। সিডিএ পাহাড় কেটে রাস্তা করেছে। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কাটছে। যাদের রক্ষা করার কথা, তারাই পাহাড় কাটছে। তাই প্রতিবছর পাহাড়ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে, কিন্তু সেই উদ্যোগ কেউ নিচ্ছে না।’

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও প্রাশাসনিক উদ্যোগ ছাড়া পাহাড় রক্ষা হবে না। আমরা বহু বছর ধরে পাহাড় রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। বর্ষা এলে সরকারি সংস্থাগুলো কিছু মিটিং করে। এসব করেই তারা দিন পার করে। কার্যকর কোনো কিছু এত বছরেও দেখলাম। তাই সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’

বিজ্ঞাপন

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমরা দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু যাদের কাজ করার কথা তারা ঘুমিয়ে আছে। নির্লিপ্ত প্রশাসনকে ধাক্কা দিয়ে সজাগ করতে হবে। এভাবে চলতে পারে না।’

কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘আমাদের বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশের গুরুত্ব যদি তার রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা না বোঝেন, তাহলে সেটা তাদের বোঝাতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এখানে দাঁড়াই, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়ে না। আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। প্রকৃতি ধংস করে সকল ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এই চট্টগ্রাম আমাদের। একে কেউ ধংস করলে তা আমরা মেনে নেব না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সভাপতি আলীউর রহমান বলেন, ‘মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে অনেক। পাহাড় রক্ষা কমিটির কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ পুলিশ ইউনিট করা হোক, যাদের সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।’

অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের মত শহরে সবার চোখের সামনে পাহাড় কাটা চলছে বছরের পর বছর। শুধু তাই নয়, পাহাড় থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে পাহাড় দখলের জন্য। নানা উপায়ে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে প্রাণ দিয়ে।’

বিজ্ঞাপন

পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, অধ্যাপক ইউনুস হাসান, অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামাল যাত্রা, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটির সদস্য মনসুর মাসুদ, ইকো ফ্রেন্ড সভাপতি উত্তম কুমার আচার্য, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উৎপল বড়ুয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়ার গ্লোবাল ইউনিয়নের মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম মান্না, হেলাল উদ্দিন, পিপলস ভয়েসের পক্ষ থেকে শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিনস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নরেশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক লামিও মারমা।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জন এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ১৩০ জন নিহত হন। নিহতদের স্মরণে সমাবেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এছাড়া সমাবেশ থেকে ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন