বিজ্ঞাপন

শাহজাহানপুর হাট: লাখ টাকার নিচে ‘গরু নেই’

June 25, 2023 | 9:49 pm

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: লাখ টাকার নিচে ‘গরু নেই’ রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটে। এই হাটে তিন মণের উপরে গরুর দাম পড়ছে এক লাখ দশ হাজার থেকে এক লাখ তিরিশ হাজার। আর পাঁচ থেকে ছয় মণের ওপরের গরুর দাম পড়ছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় বিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা বেশি পড়েছে গরুর দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি পরিবহন খরচ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৫ জুন) থেকে শুরু হওয়া শাহজাহানপুর কোরবানির পশুর হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা গেল।

খিলগাঁও থেকে মোহাম্মদ রাসেল একটি গরু কেনেন এক লাখ দশ হাজার টাকা দিয়ে। হাসিল দেন ৫ হাজার ৫০০ টাকা। গরুটির ওজন তিন মণের কাছাকাছি হবে জানালেন বিক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

ঝিনাইদহ থেকে নয়টি দেশি জাতের গরু নিয়ে এসেছেন দিল বকস বেপারি। দশ বছর ধরে ঢাকায় কোরবানির হাটে গরু নিয়ে আসেন। সারাদিনে একটিও গরু বিক্রি হয়নি তার। তার কাছে থাকা গরুর মধ্যে সর্বনিম্ন দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা যার ওজন তিন মণ দশ কেজি হতে পারে। আর সর্বোচ্চ দাম দুই লাখের গরুর ওজন পাঁচ থেকে ছয় মণ হতে পারে বলে জানান তিনি।

ঝিনাইদহ থেকে ৩৩টি দেশি জাতের গরু নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন। এর মধ্যে ছয়টি নিজের পালা আর বাকিগুলো কিনে আনা। সকাল থেকে একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তার কাছে থাকা গরুর সর্বনিম্ন দাম এক লাখ দশ হাজার টাকা যার ওজন তিন মণের কাছাকাছি।

তিনিও দশ বছর ধরে ঢাকায় কুরবানির হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবার পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর দামও বেড়েছে। তাছাড়া সড়কপথে টোল বেশি দেওয়ায় ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচও এবার বেশি পড়েছে। ৩০ টাকার ভূষি এখন ৬৫ টাকা কেজি আর ৫০ টাকা কেজির ছোলার দাম এখন ১১০ টাকা। গত বছরের তুলনায় তাই এবার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বাড়তি।

বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি দেশি জাতের গরু নিয়ে এসেছে বেপারি মোহাম্মদ রিফাজ হোসেন। তার আশা আগামীকাল ও পরশুদিন সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। গতবছর দশটি গরু নিয়ে এসেছিলেন যার সবগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবার তাই পাঁচটি গরু বেশি এনেছেন। তার কাছে থাকা গরুরও সর্বনিম্ন দাম এক লাখের উপরে। আজ একটি গরুও বিক্রি না হলেও আগামী দুইদিনের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ার আশা তার।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থানার বাহারদুরপুর গ্রামের কামাল বেপারি এসেছেন নিজের পোষা দুটো গরু নিয়ে। দুটোর দাম আড়াই লাখ। আর আলাদা করে কিনতে চাইলে একটির দাম এক লাখ বিশ যার ওজন হবে তিন মণের কিছু বেশি। আর অন্যটি পাঁচ মণের মতো যার দাম এক লাখ তিরিশ হাজার। অন্যান্যবার হাটে পাঁচ থেকে ছয়টি গরু আনলেও এবার মাত্র দুটো আনতে পেরেছেন অর্থনৈতিক সংকটের জন্য।

মাগুরার মুবারক বিশ্বাস পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে ছেলে নায়েব আলী। তারা তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকায় গরু নিয়ে আসেন। এবার আনা পাঁচটি গরু এক বছরের বেশি সময় ধরে পেলেপুষে বড় করেছেন। তার কাছে থাকা গরুর সর্বনিম্ন দাম এক লাখ তিরিশ আর সর্বোচ্চ দাম আড়াই লাখ। এর মধ্যে দুটি বকনা গরুর দাম আড়াই লাখ টাকা। চার মণের কাছাকাছি ওজনের প্রতিটি গরু আলাদা নিতে চাইলে অবশ্য এক লাখ পঁচিশ হাজারের বেশি পড়বে।

মোবারক বিশ্বাস বললেন, এবার লাখের নিচে গিরু নাই বললেই চলে। সেগুলোর ওজন এক থেকে দেড় মন। এবার বড় গরু কিনলে লাভবান হবে ক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

৪ নং কাউন্টারের আব্দুল মালেক জানান, সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দশটি গরু বিক্রি হয়েছে। এগুলোর দাম সর্বনিম্ন ৬০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা।

এদিকে সকাল থেকে বিক্রি হওয়া ৩১ টি খাসি ও ছাগলের দাম পড়েছে ১০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

ঝিনাইদহর সাব্বির হোসেন ৩০টি বড় আকারের খাসি এনেছিলেন। সারাদিনে ২৫টি বিক্রি করেছেন। এগুলোর দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

হাট ঘুরে দেখা গেল সাপ্তাহিক কর্মদিবস থাকায় এখনও জমে ওঠেনি শাহজাহানপুর হাট। হাটের প্রথম দিন সকাল থেকে ৫০টি গরু আর ৩১টি ছাগল বিক্রি হয়েছে। ইজারাদার ও বিক্রেতাদের আশা আগামীকাল দুপুরের পর থেকে বাড়বে বেচাবিক্রি। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের পাশাপাশি কোরবানির পশুর অতিরিক্ত দামও ক্রেতা কমার কারণ বলছেন তারা।

রোববার সন্ধ্যায় হাট ঘুরে দেখা গেল ক্রেতার ভিড় না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আজ অফিস-আদালত খোলা তাই দিনের বেলায় ক্রেতা আসেনি বললেই চলে। আগামী বুধবার (২৭ জুন) থেকে সরকারি বন্ধ শুরু হওয়ায় আগামীকাল (২৬ জুন) বিকেল থেকে ক্রেতার ভিড় বাড়ার আশা তাদের।

শাহজাহানপুর হাটের ইজারাদার আব্দুল লতিফ বলেন, ‘এবার গরু এসেছে অন্যান্য বারের চেয়ে কম, বিক্রিও কম। সারাদিন ৫০টি গরু বিক্রি হয়েছে। এগুলোর দাম হাসিল ছাড়া ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা। পশুপ্রতি হাসিল ৫ হাজার টাকা। হাটের অধিকাংশ বেপারি এসেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, গোপালগঞ্জ থেকে গরু এসেছে হাটে।’

হাটের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি জানালেন তিনি।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন