বিজ্ঞাপন

রাতের খুলনা খালেকময়

May 13, 2018 | 12:49 pm

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

খুলনা থেকে: রূপসার পাড় থেকে বাগেরহাট-নওয়াপাড়া মোড়ের দূরত্ব অন্তত ১০ কিলোমিটার। অথচ এখানেও হাওয়া লেগেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। দু’দিন বাদেই যে ভোট তাতে কোন প্রার্থী জিতবে সে হিসেব কষছেন অনুকূল দত্ত, জাহাঙ্গীর হোসেন আর মোসলেম আলী। তাদের হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককেই এগিয়ে রাখা হচ্ছে।

রাত প্রায় নয় টা। ফকিরহাটের পিলজঙ্গ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের এ মোড়ের বা পাশে অর্জুন সিংহের মুদি-মনোহরী দোকান। সেখানে চা-বিস্কুট পাওয়া যায়। দোকানের সামনে তিনটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে হালকা আলোয় এ তিন ব্যাক্তির আলোচনায় উঠে আসছে খুলনার রাজনীতির পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অবস্থাও।

শশ্রুমণ্ডিত মোসলেম আলীকে দেখে মনে হয় এখানকার সবচেয়ে বয়সী তিনি। অথচ তার কাছে শোনা গেলো সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের খবরাখবর। মাহাথির মোহাম্মদ ৯২ বছর বয়সে এসে যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তাতে বেশ উজ্জীবিত এবং একইসঙ্গে উৎসাহী বোঝা গেল তাকে। তার ভাষায় রাজনীতিতে বয়স কিংবা দল পরিবর্তন বলতে কিছু নেই। ভোটাররা ভোট দেন প্রার্থীর সততা-যোগ্যতা আর পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখে। যেমনটি খুলনা সিটি নির্বাচনেও হতে পারে বলে মত দেন মোসলেম।

বিজ্ঞাপন

তার ভাষায় তালুকদার আব্দুল খালেক বয়স ও রাজনীতি উভয় দিক থেকেই প্রবীণ ও দক্ষ। তাই খুলনার মানুষ এবার উন্নয়নের স্বার্থে তাকেই বেছে নেবেন। পাশে বসে থাকা অনুকূল দত্ত বললেন, মানুষ যদি বোঝে তবে খালেক সাবই (সাহেব) নির্বাচনে জিতবেন। আমরা দূরে বসে যা বুঝি তাতে এ হিসাবই আমাদের কাছে মিলে যায়। তার ভাষায় আগেরবার খুলনার মানুষ রাগ করে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। এবার তারা তাদের ভুল নিশ্চয়ই শোধরাবে। কেননা শুধু রাগ করলে হবে না শহরেরতো উন্নয়ন চাই।

অনুকূল দত্ত জানান, তিনি নিজেও মাঝে-মধ্যে খালেকের পক্ষে প্রচার-প্রচরণয় গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। খুলনায় তার বন্ধু-বান্ধব রয়েছে তারাও তার পক্ষে প্রাচরণায় নামে। স্থানীয় এমপিও (বাগেরহাট-১, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী আসনের সরকার দলীয় সাংসদ, শেখ হেলাল উদ্দিন) তালুকদার খালেকের পক্ষে কাজ করছেন। মিছিল-মিটিংএ কর্মী বাহিনী দিচ্ছেন।

খুলনা নগরীর বেশ কাছাকাছি কাকাটাখালী। সেখান থেকে মোটর সাইকেলে যেতে যেতে কথা হল চালক আলমের সঙ্গে। বাইকের সামনে নৌকার প্রার্থীর স্টিকার লাগিয়ে রেখেছেন। কথায় কথায় জানা গেলো শনিবার বিকেলেও খুলনা নগরীতে ছিলেন তিনি। সেখানে খালেকের পক্ষে কাজ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নগরীর ভোটার না হলেও বহিরাগত কর্মী হিসেবে আলমের মতে শতশত লোক এখনও নগরীতে তালুকদার খালেকের পক্ষে কাজ করছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে আলম জানান, এবার নৌকার ফিল্ড ভাল। আমরাতো উন্নয়ন চাই। আমি ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালাই, আমার দরকার ভাল রাস্তা-ঘাট। যে দল ক্ষমতায়, তাদের লোক মেয়র না হলে কোনো উন্নয়ন হয় না বলে দাবি করেন তিনি।

খেয়া নৌকায় রূপসা নদীতে থাকতেই চোখে পড়লো তালুকদার খালেকের পোস্টার। খেয়াঘাটে যে শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় করছেন তাদের গলায় তালুকদার খালেকের নৌকাপ্রতীক সংবলিত কার্ড ঝুলছে। মাথার ওপর পোস্টারগুলো রূপসার বুক ছুঁয়ে আসা বাতাসে দোল খাচ্ছে।

তীরে এসে যেখানেই চোখ যায় সেখানেই খালেকের নৌকার পোস্টারের ছড়াছড়ি। কেবল পোস্টারই নয়, ঘাট স্ট্যান্ডে দেখা মিললো মাহেন্দ্র শ্রমিক ইউনিয়নের নোতাদের। যারা অনেকটা সংঘবদ্ধ হয়ে নৌকার লিফলেট বিলি করছেন। সেখান থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত আসতে প্রায় সবখানেই নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়লো। নতুন করে পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে দলভিত্তিক কর্মী বাহিনীকে চোখে পড়লো বয়রা, রয়্যাল মোড়সহ প্রায় সবখানেই। অথচ এই পুরো এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পোস্টার তেমন চোখে পড়েনি।

বিজ্ঞাপন

অটোওয়ালা থেকে শুরু করে পান দোকানি যার সঙ্গেই কথা হয়েছে তাদের একটাই মত বাহ্যিক প্রচার-প্রচারণায় সরকার দলীয় প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকই এগিয়ে আছেন। বিএনপির ভোটারদের মতে কর্মীরাও গোপনে। তারাও নিশ্চয়ই বসে নেই। তবে তাদেরটা দেখা যায় না। সুষ্ঠু ভোট হলে কেন্দ্রে নিশ্চয়ই তার প্রমাণ হবে।

সারাবাংলা/এমএস/এমআইএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন