বিজ্ঞাপন

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, রাঙ্গামাটির ২৮ ইউনিয়ন প্লাবিত

August 9, 2023 | 8:50 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: বৃষ্টিপাত কমলেও উজানের ঢলের কারণে রাঙ্গামাটির বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমার কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমলেও ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলেও বুধবার সেটি দাঁড়িয়েছে ২৮টি ইউনিয়নে। কর্ণফুলী নদী, কাচালং নদী, রাইক্ষ্যং নদী, চেঙ্গী নদী ও শিজক নদ, সুবলং নদে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, উজানের ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়লেও ঘোলাটে হয়ে পড়ায় পানি ব্যবহারে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রান্তিক এলাকার মানুষেরা। রাঙ্গামাটির দু’টি এলাকায় বিদ্যুৎসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় দশ উপজেলায় পাহাড় ধস হয়েছে ৩৫৭টি স্থানে, সবচেয়ে বেশি ধসেছে বিলাইছড়ি, সদর ও কাপ্তাই উপজেলায়। পাহাড় ও ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৯৯টি বসতঘর, এরমধ্যে আশ্রয়ণের ঘরের সংখ্যা ২৮টি। পাহাড় ধসে ১ হাজার ৩০১ পরিবারের ৬ হাজার ৪০৬জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলার বিভিন্ন সড়কের ৬৯টি স্থানে ভাঙন হয়েছে, বন্ধ রয়েছে ১২টি গ্রাম্য সড়ক। এছাড়া ৪৫টি বিদ্যুতের খুঁটি বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছে। পাহাড় ধস ও প্লাবন পরিস্থিতির কারণে ২৬১টি আশ্রয়কন্দ্রে ৫ হাজার ৪৩১জন আশ্রয় নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ তথ্যমতে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৯৯টি গ্রামের ১০ হাজার ৬১৭টি পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ৯৬৫টি পশু আনা হলেও ১০টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। পানিতে প্লাবিত হয়ে ৩ হাজার ৩৬৮টি হেক্টর ফসলি জমি ও ১৪৯টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের হিসাবে রাঙ্গামাটিতে ৫৯৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।

রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘ঢলের পানির কারণে বুধবার পর্যন্ত প্লাবিত একটি পৌরসভা ছাড়াও ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। যে দুজন পানিতে নিখোঁজ হয়েছেন তাদের এখনো সন্ধান মেলেনি। আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৭০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

এদিকে, মঙ্গলবার পর্যন্ত রাঙ্গামাটির সাজেক উপত্যকায় প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক আটকা পড়লেও বুধবার বিভিন্নভাবে কিছু পর্যটন সাজেক পরিত্যাগ করে বলে জানিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘বুধবার তেমন বৃষ্টিপাত না থাকায় নতুন করে রাঙ্গামাটির কোনো ভাঙন-ধস দেখা যায়নি। তবে বৃষ্টিপাতের শুরু থেকে পর্যন্ত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া (বান্দরবান) সড়ক ও রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি (খাগড়াছড়ি) সড়কের ৪৫টি স্থানে সড়কের মাটি ধসে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি মাটি ধসের ঘটনা ঘটেছে ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙাহালিয়া সড়কে। বিভিন্ন সড়কে ধসে আমি সরানোর কাজ অব্যাহত আছে। যানবাহন চলাচলে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি।’

এদিকে, উজানের পানির ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি ঘোলাটে পড়ে পড়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রান্তিক গ্রামগুলোতে সাধারণ মানুষ হ্রদের ঘোলাটে পানি ব্যবহার করছেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। তবে রাঙ্গামাটি শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাতেও পরিশোধন ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, ঢলের পানির কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি ঘোলাটে হয়েছে। তবে শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমরা পানি পরিশোধনে কেমিক্যালের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছি ব্যবহার উপযোগী পানি সরবরাহের লক্ষ্যে।

বিজ্ঞাপন

জুরাছড়ি-বরকলে বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত
রাঙ্গামাটি শহর অন্যান্য উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মোটামুটি চালু থাকলেও জেলার জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। গত ৫ দিন ধরে রাঙ্গামাটির বিচ্ছিন্ন এই দুই উপজেলায় বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিপিডিবি রাঙ্গামাটি বিতরণকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান জানান, মোটামুটি অন্যান্য উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা গেলেও জুরাছড়ি-বরকলে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড় ও হ্রদের ওপর দিয়ে সোর্স লাইন নেওয়ার কারণে কিছু কিছু অংশে হ্রদের পানিতেও লাইন ডুবে গেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদের পানি পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী, বুধবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ৯৫.৭৭ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পানি রয়েছে। যদিও স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৯১ দশমিক ৫৬ এমএসএল। রুল কার্ডের হিসাবেই বর্তমানে ৪ এমএসএল পানি বাড়তি রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত আপাতত বন্ধ থাকলেও উজানের ঢল অব্যাহত থাকার কারণে পানির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এদিকে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটে গড়ে ১৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ৮৬.৪ মিলিমিটার এবং সোমবার ৬৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে আরও ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন