বিজ্ঞাপন

পূজার পর ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলন, আসতে পারে হরতাল-অবরোধ

October 5, 2023 | 11:59 am

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কুমিল্লা-ফেনী-মীরসরাই-চট্টগ্রাম অভিমুখে রোর্ড মার্চের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনের ‘সেপ্টেম্বর ঘোষিত’ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর)। আর চলতি অক্টোবরের কর্মসূচি ঘোষণা হবে দুয়েকদিনের মধ্যেই।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্র মতে, এবারের কর্মসূচি দুই ভাগে ভাগ করা হবে। আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত গতানুগতিক কর্মসূচি থাকবে। ঢাকায় মহাসমাবেশ ছাড়াও কয়েকটি সমাবেশ, পদযাত্রা ও রোড মার্চে আন্দোলন কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখা হবে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার কয়েকটি কর্মসূচি থাকতে পারে।

জানা গেছে, ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজার জন্য পাঁচ দিন কোনো কর্মসূচি দেবে না বিএনপি। দুর্গাপূজার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কঠোর কর্মসূচি শুরু হতে পারে। আসতে পারে হরতাল-অবরোধ। তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর।

দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ সময় কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পারলে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু, হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় ‘দুর্গাপূজা’র মধ্যে কোনো অবস্থাতেই কর্মসূচি রাখা যাবে না। ১৮ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা এক সপ্তাহ কর্মসূচি বিরতি দিতে হবে। এর পর ২৬ অক্টোবর থেকে ভোটের আগ পর্যন্ত চলবে বিরতিহীন কর্মসূচি।

বিজ্ঞাপন

সূত্র মতে, পূজার আগের ১০ দিনের জন্য একটা খসড়া কর্মসূচি তৈরি করেছে বিএনপি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ; যেখান থেকে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে সরকারকে। আগামী শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে পূজার পর চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। এ পর্যায়ে ঢাকামুখী রোড মার্চ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলো ঘেরাও, ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে অবরোধ এবং প্রয়োজনে হরতাল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। তবে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষ করে দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পদক্ষেপ, নির্বাচনের তফসিল ও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য’র ওপর নির্ভর করে যেকোনো সময় ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে বিএনপির আন্দোলন। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে তাদের মতামত নিয়ে রেখেছে দলটি।

দলীয় সূত্র মতে, যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ইতিবাচক সমর্থন পাচ্ছে বিএনপি, সেহেতু ‘হঠকারী’ কর্মসূচি দিয়ে এই সমর্থন হারাতে চায় না তারা। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, যেকোনো মূল্যে চলমান আন্দোলন সহিংসতামুক্ত রাখতে হবে। ২০১৩-২০১৫ সালের মতো ‘জ্বালাও-পোড়াও’ আন্দোলনে গিয়ে জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হতে চায় না বিএনপি। সেক্ষেত্রে দুর্গা পূজার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ঢাকার আশপাশের একটি জেলা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন অভিমুখে রোড মার্চ করার চিন্তা-ভাবনা আছে দলটির। এরপর পরিস্থিতি বুঝে সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ভবন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেবে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

তবে, গতানুগতিক কর্মসূচিতে বড়ধরনের বাধা এলে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি। সেটা অবশ্য অক্টোবরে নয়, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ ধরনের কর্মসূচি চিন্তা দেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। কোনোরকম সমঝোতা বা আলোচনা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আর পিছু ফিরবে না দলটি। এ পর্যায়ে হরতাল-অবরোধ দিতে দ্বিধা করবে না তারা।

জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার জনগণকে নিয়ে তাই করবে বিএনপি। জনগণই ঠিক করে দেবে কর্মসূচির ধরন। একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে ধরনের কর্মসূচি অতীতে দেওয়া হয়েছে, আগামীতেও সে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দোলন কর্মসূচি যেভাবে চলছে, এভাবেই চলবে। হরতাল-অবরোধ দিলে কী হয়, সেটা আমরা সবাই জানি। ওই অন্ধকার পথে বিএনপি হাঁটবে না।’

এদিকে ‘শ্রমিক কনভেনশন’ ও ‘পেশাজীবী কনভেনশন’র পর এবার বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘ছাত্র কনভেনশন’ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে সমমনা ১৫ ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন ছাত্রজোট গঠন করা হয়েছে। এই জোট রাজধানীতে ছাত্র কনভেনশন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় এই কনভেনশন করার চিন্তা-ভাবনা করছে।

বিজ্ঞাপন

যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর যুব সংগঠনের সমন্বয়ে যুবজোট গঠনের পর ‘যুব কনভেনশন’র চিন্তা করছে জাতীয়তবাদী যুবদল। খুব শিগগিরই এ দু’টি কনভেনশনের তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রথম সহ-সভাপতি তানজিল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্র কনভেনশন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু, তারিখ ও ভেন্যু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন