বিজ্ঞাপন

নারীর কাছে ‘ঘুষ’ দাবি করা সেই ওসি বরখাস্ত

October 23, 2023 | 7:03 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: ‘ঘুষ’ নিয়ে মাদক ব্যবসার সুযোগ করে দিতে চাওয়া রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি তিনি এক নারীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এর পর ওই নারী রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অডিও সংযুক্ত করে অভিযোগ দেন। পরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সই করা আদেশপত্রে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শনিবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে আদেশের ওই প্রজ্ঞাপন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসেছে। সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাজশাহী জেলার চারঘাট মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলমকে বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২ (১) মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি ডিআইজি, খুলনা রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ, খুলনা’র কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি এক গৃহবধূর কাছে ওসি মাহবুবুল আলম পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চান— এমন একটি অডিও ফাঁস হয়। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর চারঘাট মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত ওসি মাহবুবুল আলমের বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে।

ওসি মাহবুবুল যে নারীর কাছে ‘ঘুষ’ দাবি করেন তার নাম সাহারা খাতুন (২৮)। তিনি চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। কালু ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আছেন। তবে স্ত্রীর অভিযোগ, কালুকে ফাঁসানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে সাহারা খাতুন উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন। তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে চারঘাট এলাকার অনেক মাদক কারবারিকে র‌্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেফতারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাকে পর দিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাকে। এ সময় ওই নারীর ছেলেও তার সঙ্গে ছিল। ওসি তার সঙ্গে যেসব কথা বলেন, তা তিনি কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।

বিজ্ঞাপন

৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার স্বামী কিন্তু আমার কম ক্ষতি করে নাই। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখনো কিন্তু তোমার গায়ে আঁচর দিইনি। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (পুলিশ সুপার) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কী কী লাগবে; ৫ লাখ টাকা। কী কী জিনিস চাইছে; ৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি, আমি চেষ্টা করব। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। ওপেন। তখন আর কথা কয় না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের (এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের) চালান দিয়ে দিব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

অভিযোগের ওই অনুলিপি সরাসরি ও ডাক যোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে পাঠানো হয়। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটিও পাঠানো হয়।

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন