বিজ্ঞাপন

আ.লীগে মন্নুজান-কামাল দ্বৈরথ, বিএনপি খুঁজছে নতুন মুখ

November 24, 2023 | 3:38 pm

রেজাউল ইসলাম তুরান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খুলনা: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ‘সুন্দরবন’ তার একাংশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে যে জেলাটিকে সেটি খুলনা। সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, কবি কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদারের মতো অসংখ্যা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি এই খুলনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কমিউনিস্ট নেতা কমরেড রতন সেন, বিশিষ্ট পানি বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাতসহ অসংখ্য গুণীব্যক্তির পূণ্যভূমিও এটি।

বিজ্ঞাপন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাউদ্দিন ইউসুফ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার আবদুর রাজ্জাকসহ অসংখ্য রাজনীতিক এই খুলনায় জন্ম নিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত খুলনার রাজনীতি বেশ চাঙ্গা ছিল। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্তও সেই চাঙ্গাভাবের রেষ থাকে। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতি ঝিমিয়ে পড়ে। মাঝে একবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল খুলনার রাজনীতি। তবে গোটা খুলনায় এখন রাজনীতির কোনো চমক নেই, জৌলুসও নেই। মাঝখানে তো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছিল। তবে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে রাজনীতি ফের চাঙ্গা হয়েছে।

আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলছে না। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই দাবিতে তারা এখনও হরতাল-অবরোধ দিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই খুলনার সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। আর রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি রয়েছে আন্দোলনে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের হিসাব-নিকাশ কিছুটা হলেও পাল্টে যাবে। কারণ, তারাও দুয়েকটি আসন দখলে ভোটের মাঠে নামবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে খুলনা-৩ আসনের চিত্র।

সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং দীঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত খুলনা-৩ আসন। জাতীয় সংসদের ১০১ নম্বর আসন এটি। শিল্পাঞ্চলখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত এই আসনটি। বারবার এই আসনটিতে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারও আসনটি ধরে রাখতে চায় টানা তিন বার ক্ষমতায় থাকা দলটি। তবে বিএনপি নির্বাচনে গেলে এই আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাবে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে খুলনা-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী। ১৯৭৯, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এই আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আশরাফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সবশেষ তিন সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে রাজত্ব করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে যথাক্রমে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাসিন বানু শিরিন এবং আবদুল গফফার বিশ্বাস। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জয়ী হন বিএনপির দলছুট নেতা সেকেন্দার আলী ডালিম। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি ফের দখল করেন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন।

বিজ্ঞাপন

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান অনেক নেতা। এমনকি নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিতেও প্রার্থিতা নিয়ে লড়াই হবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকার কারণে।

২০০৮ সাল থেকে এ আসনের এমপি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন মনোনয়ন চাইছেন। এই দুই জনের বাইরেও দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন মহানগর সদস্য অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার, নগর আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক ফারুক হোসেন হিটলু, দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ বাদল আহমেদ।

বিএনপি নির্বাচনে গেলে এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি ছাড়াও দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে পারেন আবু নাঈম মোহাম্মদ ফখরুল আলম, অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, আরিফুর রহমান মিঠু, মোশাররফ হোসেন।

এর বাইরে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আব্দুল গফফার বিশ্বাস লাঙ্গলের প্রার্থী হতে পারেন। তিনি ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের মহানগর শাখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন অথবা কেন্দ্রীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসান ওবায়দুল করিমও প্রার্থী হচ্ছেন এ আসন থেকে।

বিজ্ঞাপন

মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি দলের জন্য রাজনীতি করি। ছাত্রজীবন থেকে খুলনায় রাজনীতি করছি। তবে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। দলের পক্ষ থেকে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করব।’

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে এখন কোনো আলোচনা করতে চাই না। পরে কথা হবে।’

উল্লেখ্য, খুলনা-৩ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৫৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ২৫২ জন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি ওই সময় পান ৭৪ হাজার ৬৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সেকান্দার আলী পান ৫৮ হাজার ১৭৭ ভোট। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের টিকিট পান মন্নুজান সুফিয়ান। ওই নির্বাচনে তিনি ৪৫ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান খান খোকন পান ৬ হাজার ৪২৪ ভোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের দলীয় মনোনয়ন পান মন্নুজান। ওই নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল পান ২৩ হাজার ৬০৬ ভোট।

সারাবাংলা/আরআইটি/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন