বিজ্ঞাপন

সাফল্য পেয়েছেন রুহুল, আম বাগানে আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা

November 25, 2023 | 8:00 am

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নওগাঁ: নওগাঁর পত্নীতলায় আম বাগানে গাছের নিচে বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন চাষি রুহুল আমিন। এর আগেও তিনি তিনি বস্তায় আদা চাষ করে সাফল্য পেয়েছিলেন। বস্তায় আদা চাষ সহজ ও খরচ কম এবং লাভ দ্বিগুনের বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই রুহুলের দেখাদেখি আদা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় আদার চাহিদা রয়েছে দুই হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এ বছর জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ৩৯০ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন হবে। জেলায় প্রায় ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, যা থেকে আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ মেট্রিক টন। এ পরিস্থিতিতে বস্তায় আদা চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করে চলেছে কৃষি বিভাগ।

অধিদফতর বলছে, আদা রাইজেমজাতীয় বীরুৎ মসলা এবং ভেষজজাতীয় উদ্ভিদ। আদিকাল থেকে মানুষ আদার বিভিন্ন ব্যবহার করে আসছে। মুখের রুচি বাড়ানো ছাড়াও বদহজম, সর্দি-কাশি আমাশয়, জন্ডিস ও পেট ফাঁপা নিরাময়ে আদার ব্যবহার রয়েছে। তবে আদা সবচেয় বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে মসলায়। এর রাইজম সুগন্ধি ও ঝাঁঝালো হওয়ায় খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।

উপকারী এই ভেষজ মসলাটি তিন বছর আগে প্রথম বস্তায় চাষ করেন জেলার পত্নীতলা উপজেলার পাটি আমলাই গ্রামের চাষি রুহুল আমিন। আম বাগানে গাছের নিচে ফাঁকা জায়গায় ৪০টি বস্তায় আদা লাগিয়েছিলেন। ফলন ভালো পাওয়ায় পরের বছর আদা চাষ করেন চার হাজার বস্তায়। এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পে’র আওতায় আম বাগানের ৫০ শতাংশ জমিতে ১৪ হাজার বস্তায় বারী-১ জাতের আদা চাষ করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আদা চাষি রুহুল আমিন জানান, প্রতি বস্তায় বস্তা, মাটি, জৈব সার ও বীজ মিলিয়ে আদা চাষে তার খরচ পড়েছে ২০ টাকা। সে হিসাবে ১৪ হাজার বস্তায় মোট খরচ প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি বস্তায় গড়ে ৮০০ গ্রাম আদা উৎপাদন হবে ধরে নিলেও বর্তমান বাজারদরে ১৪ হাজার বস্তা থেকে আদা উৎপাদন হবে ১১ হাজার ২০০ কেজি। বর্তমানে পাইকারি বাজারেই আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এ হিসাবে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আদা উৎপাদন হবে এই আম বাগানে।

রুহুল আমিনের আম বাগানে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসছেন বস্তায় আদা চাষ দেখতে। ছবি: সারাবাংলা

রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, কৃষি অফিস থেকে আদা চাষে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়েছি। উপকারও হয়েছে অনেক। এখন পাইকাররা বাড়ি থেকে আদা কিনে নিয়ে যেতে অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি এখনই আদা বিক্রি করতে চাই না। বাজারে আদার দাম বাড়ছে। আশা করছি দাম ভালো পাব।

রুহুল আমিনের স্ত্রী নারগিছ বেগম বলেন, আমাদের দেখে গ্রামের অনেকেই বাড়িতে খাওয়ার জন্য আদা চাষ করেছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই আদার ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে লোকজন আসছে। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি স্বামীকে আদা ক্ষেতে পানি দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কারের কাজে সহযোগিতা করেছি। আশা করছি আদার ভালো ফলন পাব। আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ বস্তায় আদা চাষের ইচ্ছা আছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় চাষি আরাফাত হোসেন বলেন, প্রথম দিকে রুহুল আমিনকে বস্তায় আদা চাষ করতে দেখে অনেকেই হাসাহাসি করেছে। তবে বছর শেষে তিনি যখন ভালো মুনাফা পান, তখন সবাই অবাক হয়ে গেছে। এখন তো প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা রুহুল আমিনের বাড়িতে আদার ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে ছুটে যাচ্ছে। আমি নিজেই আগামী বছর ১০ শতাংশ জায়গায় এক হাজার বস্তা আদা চাষ করব ঠিক করেছি।

পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আদা চাষে এরই মধ্যে ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে চারজন চাষিকে কৃষি বিভাগ থেকে ২০০ পিস জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারে বছরে সাত থেকে আট কেজি আদার চাহিদা থাকে। প্রতিটি পরিবার ২০ বস্তা করে আদা লাগালেও তাদের আদার সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়েও বাড়তি থাকবে।

আমের ‘নতুন রাজধানী’ নওগাঁর আম বাগানগুলোকে আদা চাষে খুব কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। আমের মৌসুম ছাড়া বাকি সময় গাছের নিচের অংশ ফাঁকা পড়ে থাকে। আম বাগানগুলোকে যদি আদা চাষের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও আদা অন্য জেলায় বিক্রি করা সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন