বিজ্ঞাপন

জি এম কাদের চড়েন ৮৫ লাখ টাকার জিপে, রাঙ্গাঁর সম্পদ বেড়েছে ১৫ গুণ

December 8, 2023 | 10:57 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: পাঁচ বছরের ব্যবধানে উত্তরের জেলা রংপুরের ছয়টি আসনের সংসদ সদস্যেরই কয়েকগুণ বেড়েছে অর্থ ও সম্পদ দুটোই। তাদের মধ্যে কারও বেড়েছে নগদ অর্থ, আবার কারও ব্যাংক জমা। কেউ কিনেছেন জমি, আবার কেউ কিনেছেন দালানকোঠা। এছাড়া কারও কারও স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদও বেড়েছে কয়েকগুণ।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয় সংসদীয় আসনের তিন জায়গায় রদবদল হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইফ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাননি। এ আসনে এবার জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের আপন ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহারিয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন রাঙ্গা। তার মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে।

রংপুর- ৩ আসনে এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদকে বাদ দিয়ে এই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এছাড়া রংপুর-৫ আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান নিজে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না নিলেও তার ছেলে রাশেক রহমান ওই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। রংপুরের প্রতিটি আসনের সংসদ সদস্যের বিগত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ।

বিজ্ঞাপন

প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সংসদে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও রংপুর সিটির আংশিক) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১৫ গুণেরও বেশি। সেই সঙ্গে আগেরবার (২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামায়) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ জমা না থাকলেও এবার তিনি দেড় কোটি টাকার বেশি গচ্ছিত আছে বলে দেখিয়েছেন। এ ছাড়াও ৫ বছরে জমিসহ স্থাবর সম্পদ বেড়েছে অনেক।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ হলফনামায় ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছিলেন ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৫ টাকা। তার কৃষি খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছিল বছরে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৮ টাকা। এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া পেতেন ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৭ টাকা। ব্যবসা বাবদ আয় ছিল ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫ টাকা। চাকরি খাতে আয় দেখানো হয়েছিল ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮০ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য খাতে আয় দেখানো হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩২ টাকা। অপরদিকে রাঙ্গাঁর স্থাবর সম্পদ, কৃষিজমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালান ও ফিলিং স্টেশন রয়েছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি নিজেকে পরিবহন মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এর আগে তার নামে কোনো মামলা নেই বলে উল্লেখ করলেও এবার তার বিরুদ্ধে মামলার কথা উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়াও বিগত পাঁচ বছরে বেড়েছে তার জমিসহ স্থাবর সম্পত্তিও। ২০১৮ সালের হলফনামায় জমির পরিমাণ ১২ একর ৩৩ শতক দেখানো হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ একর ৫৪ শতকে। আর পাঁচ বছর আগে কৃষি, অকৃষিজমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, বাগান ও খামারের মূল্য ও আয় ছিল ৩ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ২৭৫ টাকা। এবার দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৬ টাকা। ২০১৮ সালে ব্যাংকঋণ দেখানো হয় ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৫ টাকা। আর এবারের হলফনামায় ব্যাংক ঋণ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৭ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষি খাত, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা, চাকরিসহ শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র।

বিজ্ঞাপন

মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ রংপুর-১ আসন থেকে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোট তিনবারই তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন নাকি দলীয় প্রার্থী হবেন এ জন্য ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ আসনে এবার জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের আপন ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহারিয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

রাঙ্গাঁর দাবি তিনি ২০ বছর ধরে তিস্তানদী ঘেঁষা গঙ্গাচড়ার উপজেলার সকল স্তরের মানুষের পাশে থেকে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকার মানুষ নির্বাচনে তার পক্ষে রায় দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় তার নগদ টাকার পরিমাণ না বাড়লেও বেড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ। একইসঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খাতের ব্যয়ও। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ডিউক চৌধুরীর নগদ টাকা ছিল ৫ লাখ এবারও নগদ টাকা একই পরিমাণ রয়েছে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থ জমা না থাকলেও এবার নিজ নামে নগদ ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬১ টাকা ও তার স্ত্রীর নামে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১১৩ টাকা জমা দেখিয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজ নামে পরিবহনের ব্যয় হিসেবে ৯০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন যা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৭০ হাজার টাকা।

রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালে মারা গেলে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদ। তবে এবারের নির্বাচনে আসনটি থেকে সাদ এরশাদকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে। এর আগে তিনি লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জিএম কাদেরের জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে তিনগুণের বেশি। একইসঙ্গে তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের (ঢাকা ১৮ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী) সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

বিজ্ঞাপন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জিএম কাদের উল্লেখ করেছিলেন, তার নগদ ছিল ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টাকায়। একই সঙ্গে তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের নগদ ছিল ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ টাকা, পাঁচ বছরে বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর আগে জমা ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার হয়েছে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৩ টাকা। স্ত্রীর ছিল ৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৮২ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা।

জিএম কাদের আগে চড়তেন ৪০ লাখ টাকা দামের প্রাডো গাড়িতে, এখন চড়েন ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৫ টাকার জিপ গাড়িতে। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী শেরীফা কাদের চড়তেন ১৫ লাখ টাকার গাড়িতে, এখন তিনি চড়েন ৮০ লাখ টাকার জিপে। নিজ ও স্ত্রীর নামে জমি, বাড়ি, স্বর্ণালংকার বাড়েনি।

রংপুর -৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে পরপর ৩ বারের এমপি ও বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নগদ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থসহ সবই দেখিয়েছেন তার স্ত্রীর নামে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজ নামে নগদ ২ কোটি ৯০ হাজার ২৩৬ টাকা, বন্ড, শেয়ার ও ঋণপত্রের ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকাসহ সব সম্পত্তি দেখিয়েছেন নিজ নামে, স্ত্রীর নামে দেখাননি কিছুই। তার আসনে বিদ্যুতায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে শতভাগ আর স্বাস্থ্য সেবা ও যোগাযোগ উন্নয়নে অর্জন ৯০ শতাংশ উল্লেখ করেছেন হলফনামায় ।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এইচ এন আশিকুর রহমান সরকারের টানা তিনবারসহ পাঁচ বারের এমপি। তবে এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নেননি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেক রহমানকে। গত ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনকে সবসময় ভিআইপি আসন বলে অভিহিত করা হয়। এ আসন থেকে টানা দুবার সংসদ সদস্য সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় তার নগদ টাকার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১১ টাকা আর এবারে জমা দেওয়া হলফনামায় এর পরিমাণ দেখিয়েছেন ১ কোটি ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ২২ টাকা। গেল পাঁচ বছরে তার আসনে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন বলে উল্লেখ করেন।

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন