বিজ্ঞাপন

নৌকা-লাঙ্গলের পথে বাধা ট্রাক-কেটলি, তবু নির্ভার কাদের-শিরীন-টিপু

December 25, 2023 | 8:29 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দুঃশ্চিন্তামুক্ত আছেন হেভিওয়েট ৩ প্রার্থী। অন্যদিকে বাকি ৩ আসনের মধ্যে দু’টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী, আরেকটি জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় অস্বস্তি ও হতাশায় রয়েছেন তারা। নির্বাচনে এই ৩টি আসনেই মূলত চমক এবং ভোটাররা প্রার্থীদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রংপুরের ৩টি হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে সমঝোতার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। ফলে জিএম কাদেরের জয় অনেকটা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ফলে নির্বাচন নিয়ে দুঃশ্চিন্তামুক্ত আছেন জি এম কাদের।

রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল। তবে এ নিয়ে নির্বাচনে তেমন কোন উত্তাপ নেই। গত নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে মাত্র ৭ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। গত নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবার নির্বাচনে না আসায় নির্বাচনে জয় পাওয়া নিয়ে টিপু মুনশিও নির্ভার রয়েছেন।

আর রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার বর্তমান সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া যাদু। তবে পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের আধিপত্যের কারণে ড. শিরীন শারমিন নির্বাচনি দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে। তবে তাকে ‘ডামি’ প্রার্থী বলেই মনে করছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

তবে নির্বাচনের রেশ পড়েছে রংপুর-১, রংপুর-২ এবং রংপুর-৫ আসনে। এই তিনটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।

এরমধ্যে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে উত্তাপ ছড়িয়েছেন ৩ প্রার্থী। এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জি এম কাদেরের ভাতিজা মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। আসন সমঝোতার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।

তবে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা (ট্রাক প্রতীক) ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু (কেটলি প্রতীক) নির্বাচনের মাঠ কাঁপাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ ও ১৯৭৯ সালে আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে এখন অবধি আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। তবে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বর্তমান অবধি এই আসনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কেউই এই আসনের ভোটার নন। তাই স্থানীয় ও বহিরাগত প্রার্থীর ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার এ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এবার স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরে জোরেশোরেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলু।

আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘আমি ছাড়া এই আসনের কোনো প্রার্থীই স্থানীয় না, সবাই বহিরাগত। অবহেলিত গঙ্গাচড়ার মানুষ আমাকে নিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। তাই এ আসনের মানুষ আমাকে তাদের সন্তান মনে করেন, তারা আমার ওপর ভরসা পায়। নির্বাচিত হলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। তাই সর্বস্তরের ভোটার আমাকে ভোট দেবেন-এটাই প্রত্যাশা করি।’

তবে জাতীয় পার্টির দীর্ঘদিনের (৩ মেয়াদ) সংসদ সদস্য হিসেবে নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে চতুর্থবারের মতো জয়ের আশায় নিজের শক্ত অবস্থানের কথাও বলছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাঙ্গা। মসিউর রহমান রাঙ্গা জানান, তার সময়ে এলাকার যে উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে কেউ করেনি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়নে বদলে গেছে তিস্তা নদীবেষ্টিত এই জনপদ। তাই মানুষ এবারও তাকে ভোট দেবে।

আর জাতীয় পার্টির ইমেজ ও বিগত সময়ে ওই এলাকার উন্নয়নের মূল্যায়ন করে আবারও মানুষ লাঙলে ভোট দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির প্রার্থী আসিফের।

বিজ্ঞাপন

এদিকে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মন্ডল ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বদরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটুর (ট্রাক প্রতীক) মধ্যে লড়াই হবে।

এই আসনের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

অন্যদিকে, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমানের (নৌকা) সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের (ট্রাক)।

এছাড়া এই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান। গত নির্বাচনে এখানে তৃতীয় অবস্থানে ছিল লাঙ্গল প্রতীক। এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না থাকায় এখানে ভোটে চমক থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান ও তার ছেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত রাশেক রহমান জনগণের রায় পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এমপি আশিকুর রহমান প্রতিটি পদে পদে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছেন। ৪০ বছর ধরে আমি মিঠাপুকুরে আছি। ভোট নিয়ে অন্যদের মতো পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর আমেরিকায় আমি থাকব না। আমি আপনাদের মাঝেই থাকব।’

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুরের ৬টি আসনে ৩৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন