বিজ্ঞাপন

জাতীয় নির্বাচন ২০২৪: একজন পর্যবেক্ষকের অবলোকন

January 9, 2024 | 3:17 pm

ড. মিহির কুমার রায়

বিগত ৭ই জানুয়ারী উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে যেখানে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১৯৭১ জন প্রার্থী অংশগ্রহন করেছিল এবং এরি মধ্যে ফলাফলও বেসরকারী ভাবে ঘোষনা করা হয়েছে যেখানে দেখা যায় যে আ.লীগ ২২৩টি, জাপা ১১টি, স্বতন্ত্র ৬২টি এবং অন্যান্য ২টিতে বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ/নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় হোটেল সোণারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংএ বিদেশী পর্যবেক্ষক দলও নিরপেক্ষ অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জ্যতিক মিডিয়াতেও বাংলাদেশের নির্বাচন বিশেষ কভারেজ পেয়েছে যা দেশের গনতন্ত্রের জন্য সুফলবার্ত। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ক্ষমতার নবায়ন ঘটল। নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও সারাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে যদিও বিরোধী বলয় নির্বাচনের দিন হরতাল দিয়েছিল যার কোন প্রভাব দেখা যায়নি সারাদেশে। এখানে উল্লেখ্য যে সারাদেশে ৪২ হাজার কেন্দ্র দুই লক্ষাধিক বুথে নির্বাচন হয়েছে যা একটি বড় আয়োজনও বটে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে– ৪১.৭ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে যাকে খুব ভালো উপস্থিতি বলা যায়। কারণ আমরা জানি, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। সে নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিল। তখন তো পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। তখন যদি ৫৫ শতাংশ হয়, আর এখন ৪০ শতাংশ হওয়া মানে– যথেষ্ট। আমরা এমনকি নাগরিক হিসেবে বারবার বলেছি, সবার অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন চাই , সরকার সংবিধানের পথে অবিচল ছিল, সে অনুযায়ী ভোট করেছে এবং একে আমরা নির্বাচন সফল হয়েছে বলব।

বিজ্ঞাপন

আমি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হয়ে ধানমন্ডী-১০ নির্বাচনী এলাকার অনেকগুলো কেন্দ্র কমিশনের নির্দেশীকা অনুসারে পর্যবেক্ষন করি যার মধ্যে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী সকালে তার মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করেছেন। এই কেন্দ্রটি অবস্থানগত দিক থেকে খুবই সুবিধাজনক বিধায় ভোটারদের জন্য অবশ্যি একটি সহায়ক পাওনা বলা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে এই নির্বাচনী এলাকাটি ধানমন্ডী থানা,শেওে বাংলানগর থানার কিছু অংশ,লালবাগ থানার কিছুঅংশ ও হাজারীবাগ থানার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। ফলে কেন্দ্রগুলো প্রায় সবগুলো প্রাথমিক/মাধ্যমিক স্কুলে হওয়ায় ্এবং অবস্থানগত উপযুক্ততা নিয়ে কেন ঘাটতির অপর্যাপ্ততা পরি লক্ষিত হয়নি যদিও প্রাথমিক স্থরের স্কূল অনেকগুলো শতবর্ষে কিংবা আরও আগের প্রতিষ্ঠিত। যে ৩২টি কেন্দ্রে আমার পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে সে গুলোর ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিশনের নীতিমালা অনুসারেই করা হয়েছে এবং প্রিসাইডিং/সহকারী প্রিসাইডিং/পুলিং অফিসারবৃন্দ তাদেরকে নিদৃষ্ঠ স্থানে বসেই তাদের দায়িত্ব পালন কবতে দেখা গেছে। যে সমস্ত দল তাদের পুলিং এজেন্ট দিয়েছে তাদেরকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র বহন করে নির্দিষ্ঠ স্থানে আসন গ্রহন করতে দেখা গেছে। ইলেকশন সামগ্রী যেমন ভোটার তালিকা, ব্যলট পেপার, কালী,সংরক্ষিত ভোট প্রদানের ঘর সুরক্ষিত ছিল। কোন অনাকাংক্ষিত বহিরাগতকে কেন্দ্রের ভিতরে দেখা যায় নি এবং ভোট প্রদানেচ্ছু অনেককেই সারিবদ্ধভাবে লাইলে দাড়িয়ে সেই প্রতিক্ষিত নিজের পছন্দের প্রার্থীক ভোট প্রদানের ক্ষনটির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বেশ কিছু হাজারীবাগ থানার কেন্দ্রে অতিশয় বৃদ্ধা ও তৃতীয় লীঙ্গের ভোটারদেরকে ভোট দিতে আসতে দেখা যায়। হয়তো বৃদ্ধাদের জীবনের শেষ ভোটই এটি এবং ভোট দিতে পেরে তারা খুশি। শীতের মৌসুম বলে সকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও দুপুর থেকে তা বাড়তে দেখা যায়। আমারসাথে দুইজন বিদেশী পর্যবেক্ষক ছিল এবং তাদের সাথে আমার অনেকক্ষন ধরে আলাপ হয়েছে। তাদেরও একি মত সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনর হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের শতর্ক থাকতে দেখা যায় এবং আমি যে কেন্দ্র গুলোতে পরিদর্শনে গিয়েছি সেখানে কোন অপ্রতীকর ঘটনার খবর পাওয়া য্য়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ প্রায় সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্যে রয়েছে। সার্বিক ভাবে আমার অবলোকনে নির্বাচন সুষ্ঠ, অংশগ্রহনমূলক ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে সত্যি,এর পরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু সুপারিশ রইল যেমন: এক: ভোট কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সিলেকটিব হওয়া উচিত। কারন হাজারীবাগ থানার আওতায় কিছু স্কুল জরাজীর্ণ, সরু, অস্বাস্থ্যকর যেখানে কেন্দ্র করা হয়েছে এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার পাওয়া গিয়াছে যেখানে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে: দুই- ভোট দেয়ার সময় যখন কোন ভি.আই.পি প্রার্থী /এম.পি/সাবেক এম.পি প্রবেশ করে তখন সাথে আরও সমর্থক কর্মী কেন্দ্রে প্রবেশ করে যা নির্বাচন আচরনবিধীর পরিপন্থী। তাই কেন্দ্রের পবিত্রতা রক্ষার্থে শৃঙ্কলা বজায় রাখতে হবে: তিন- ভোট কেন্দ্রের ভিতরে কাপড় দিয়ে মোড়ানো যে ঘরটি পোলিং বোত হিসাবে ব্যবহ্রত হয় সেটি মোটেই নিরাপদ নয় যার আধুনিকায়ন প্রয়োজন; চতুর্থ- লক্ষ্য করা গেছে যে কেন্দ্রের বাহিরে ভেটারদের চাপ কিন্তু ঘরের ভিতরে পোলিং অফিসাররা বসে আছে ভোটারদের অপেক্ষায়। এ বিষয়টিতে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। সর্বশেষে বলা যায় সংবিধানে আছে বলে আমরা পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন করে থাকি। দুনিয়ার সব গণতান্ত্রিক দেশে এই প্রক্রিয়া আছে। সেখানে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের তা ঘটছে চলছে। নির্বাচনের সফলতা নির্ধারিত হয় জনসাধারণের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা, উন্নততর প্রশাসন ব্যবস্থা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে। এসব লক্ষ্য মাথায় রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন সরকারের কাছে আমাদের সেই প্রত্যাসা রইল।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন