বিজ্ঞাপন

বাজারে দামের উত্তাপ কমলেও স্বস্তি নেই ক্রেতাদের

March 15, 2024 | 6:14 pm

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রমজান শুরুর আগেই মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় এক লাফে। প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম বেড়ে যাওয়ায় রোজার শুরুতে বাজারে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন সাধারণ মানুষ। তিন দিন পর রমজানের প্রথম শুক্রবারে সে তুলনায় কিছুটা হলেও দাম কমেছে মাছ-মাংস-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের। তবে এটুকু কমার পরও যে দাম দাঁড়িয়েছে, তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না ক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন

রমজানের প্রথম শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁও, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৭২০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার তথা পোল্ট্রি মুরগির দাম বাজারভেদে কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা কমছে। প্রায় সব ধরনের মাছের দামও কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। প্রথম রোজার তুলনায় সামান্য কমেছে লেবু, শসা ও বেগুনের দামও।

রমজানের প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০-৮০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ১১০-১২০ টাকা ও লেবু প্রতি হালি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বড় আকারের লেবুর দাম ছিল আরও বেশি। সেখানে শুক্রবার আগারগাঁওয়ের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। এই বাজারে শুক্রবার বড় আকারের লেবু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা হালি আর দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারের টুটুল মাংস বিতানের মালিক মো. টুটুল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তিন দিন আগেও দাম একটু বেশি ছিল।’

বিজ্ঞাপন

শ্যামলী কাঁচা বাজারের আশরাফিয়া মাংস বিতানের বিক্রেতা আশরাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ গরুর মাংস ৭০০-৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। তবে খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’

শাক-সবজির দামও প্রথম রমজানের তুলনায় সামান্য কমেছে। ছবি” সারাবাংলা

মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারে গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এই বাজারের মাংস বিক্রেতা আরমান মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ গরুর মাংস ৭০০-৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। গত সপ্তাহের চেয়ে একটু কমেছে।’

এদিন পোল্ট্রি মুরগি ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সোনালি মুরগি ৩২০-৩৩০ টাকা ও কক মুরগি ৩১০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। আর মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০-১৩০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৮০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিন মাছের বাজারও ছিল সামান্য কমতির দিকে। মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা কেজি আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’

একই চিত্র চোখে পড়েছে শ্যামলী ও আগারগাঁওয়ের মাছ বাজারে। কৃষি বাজারের মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, মাছের দাম বাড়েনি। তবে কিছু কিছু মাছের দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা কমেছে। এক কেজি ও এর চেয়ে বেশি ওজনের রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, মাঝারি আকৃতির চিংড়ি ৮০০ টাকা কেজি, পাঙাস ও তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি, সিলভার কার্প ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি এবং একটু বড় আকারের শিং মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে রমজানে বেশি চাহিদা থাকা লেবু, শসা ও বেগুনের দামও কিছুটা কমেছে। এদিন বড় আকারের লেবু ৬০ টাকা হালি, দেশি শসা ৮০-১০০ টাকা কেজি, লম্বা বেগুন ১০০-১১০ টাকা, কালো রঙের গোল বেগুন ৭০-৮০ টাকা ও সবুজ গোল বেগুন ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দেশি পেঁয়াজ এখনো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। ছবি: সারাবাংলা

শ্যামলীর সবজি বিক্রেতা আহাদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আজ লেবু শসা ও বেগুনের দাম কিছুটা কমেছে। রোজার প্রথম দিনের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরে এ দিন পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও আদা ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে।

প্রথম রমজানের তুলনায় চতুর্থ রমজানে এসে মাছ-মাংসসহ সবজির দাম কিছুটা কমলেও তা ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে পারছে না। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বাজার করতে এসেছিলেন শিরীন ফাহমিদা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রতি রমজানেই আমরা আমরা এরকম দেখতে পাই। রোজার আগে হঠাৎ করে সবকিছুর দাম একদম নাগালের বাইরে চলে যায়। এখন আবার দেখেন দাম একটু কমেছে। কিন্তু এখনো সবকিছুর দাম একমাস আগের তুলনায় অনেক বেশি। সামান্য দাম কমিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন বলবেন, তারা সবকিছুর দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দামও তো অনেক বেশি। আমাদের কষ্ট তো কমছে না।’

আগারগাঁওয়ের বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আলিমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাজারে এসে জিম্মি হয়ে পড়ছি। কেউ দেখার নেই। প্রতিদিনই শুনি সরকারের সব মহল থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, কেউ যেন দ্রব্যমূল্য না বাড়ায়। কিন্তু বাজারে এলে মনে হয়, সেই কথাকে কেউ গুরুত্বই দিচ্ছে না। তা না হলে সবকিছুর দাম এভাবে বাড়ত না। এই গরমে রোজার মধ্যে একটু লেবুর শরবত বা শসার মতো সবজি খাওয়াটা তো শরীরের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু দেখেন, বাজারের সবচেয়ে ছোট আকৃতির লেবুর হালিও ৪০ টাকার কম নয়। খারাপ শসাটাও কেজি ১০০ টাকা। আমরা খুব চাপে আছি।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন