বিজ্ঞাপন

বন্ধের পথে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’, লোকসানে বিআরটিসি

March 19, 2024 | 1:37 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় চলাচল করা গণপরিবহনে শৃঙ্খলা এনে মানুষের যাতায়াত স্বাচ্ছন্দ্য করতে চালু করা হয়েছিল ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। বছর তিনেক আগে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শুরু করা সেই সার্ভিস এখন বন্ধের পথে। উঠে গেছে স্টপেজ, নেই টিকিট কাউন্টার। তিন রুটের এক রুট এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। চালু থাকা দুই রুটের বাসও কমে গেছে। নাম মাত্র ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ উদ্যোগে টিকে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনও (বিআরটিসি) ধুঁকছে লোকসানে।

বিজ্ঞাপন

বিআরটিসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে গিয়ে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে বিআরটিসি’র। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও বাস নামালে লোকসানের বোঝা বাড়বে। তবে ঢাকা নগর পরিবহন নিয়ে আশা ছাড়ছে না ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসি)। তারা বলছে, এই উদ্যোগে দ্রুতই পরিবর্তন আসবে।

রাজধানী ঢাকার ভেতরে চলাচল করা গণপরিবহন কোম্পানিগুলোকে একই ‘ছাতার নিচে’ আনার লক্ষ্যে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। সেপ্টেম্বর মাসে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করে সরকার। এরপর কেটে যায় আরও তিন বছর। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। চালু করা হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’।

শুরুটা হয় কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় ৫০টি বাস চালুর পর পরের বছর ২০২২ সালের অক্টোবরে আরও দুই রুটে ৫০টি করে ১০০ বাস চালু করা হয়। এই দুই রুটের মধ্যে একটি ঘাটারচর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়াটার পর্যন্ত। আরেকটি ঘাটারচর থেকে কদমতলী পর্যন্ত। এই রুটে বেসরকারি হানিফ পরিবহনের ছিলো ৩০টি বাস আর বিআরটিসির ২০টি।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রুটে বাস চলাচল এখন পুরোপুরিই বন্ধ রয়েছে। বিআরটিসির তথ্যানুযায়ী, এখন ঢাকা নগর পরিবহনে সব মিলিয়ে তাদের গাড়ি চলছে মাত্র ২২টি। শুরুর দিকে বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরকারের এই উদ্যোগে থাকতে আগ্রহ দেখালেও পরে তারা ধীরে ধীরে সরে গেছে। ফলে ঢাকা নগর পরিবহন উদ্যোগে বাসের সংখ্যাও কমে গেছে।

এখন যেসব বাস চলছে তারাও নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। অথচ নিয়ম ছিলো যত্রতত্র বাস থামবে না, টিকিট ছাড়া কেউ উঠবে না, নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকেই যাত্রীদের উঠতে হবে। এখন সে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন সড়কের যেকোনো জায়গায় হাত ইশারা করলেই বাস থামে, যাত্রী তোলে। দেওয়া হয় না টিকিট, নেই নির্দিষ্ট কাউন্টারও। ফলে যে উদ্দেশ্যে ঘটা করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো তা ব্যহত।

বিজ্ঞাপন

‘ঢাকা নগর পরিবহন’কে বিআরটিসির লজ প্রজেক্ট আখ্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা মিথ্যা নয় যে, এখন সুনির্দিষ্ট কোনো স্টপেজ নেই। যেখান সেখান থেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু বেসরকারি বাসগুলো তো সেটা মানছে না। বেসরকারি কোম্পানি যারা চালাচ্ছে তারা কিন্তু যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী নিচ্ছে, সেখানে বিআরটিসি নিয়ম মতো চলে তো যাত্রী পাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে আমরা ডিটিসি’র সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসবো। আমরা ঢাকা নগর পরিবহনে মোট ১০০ জনকে ডিউটি ভাগ করে দিয়েছি। আমরা আসলে মনিটরিংয়ে যেতে চাচ্ছি। তবে টাইম শিডিউল আনতে পারিনি।”

বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের এখন ঢাকা নগর পরিবহনে গাড়ি দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ি তুলে নিতে পারছে, কিন্তু বিআরটিসি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারের তো প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এই রুট ডেডিকেটেড না করা যায় তাহলে সাসটেন করা সম্ভব না।’

ঢাকা নগর পরিবহনের এই পরিস্থিতির পরেও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসি) বলছে আগের কথাই। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এবং বাস রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব সাবিহা পারভিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবার প্রতিশ্রুতি না থাকলে তো এটা বাস্তবায়ন কোনোভাবে সম্ভব না। বেসরকারি খাতকে একনিষ্ঠ হতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে রোজার পরে আমরা বৈঠক করবো। মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে আমরা নগর পরিবহনে আমরা পরিবর্তন আনবো। শিগগিরই সে উদ্যোগ বাস্তবে রূপ নেবে। সরকারের অঙ্গীকার সামনে রেখে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ঢাকা ও এর আশপাশ মিলিয়ে চলাচল করা বাস রুটের সংখ্যা দুইশোর বেশি। যাত্রী তোলার জন্য একইরুটে চলাচল করা এক বাস অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত হয়, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এই বিশৃঙ্খলা দূর করতে ‘বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ’ বা ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ এর কথা ওঠে ২০০৪ সালে। তখন ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন মহাপরিকল্পনায়।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র থাকার সময় আনিসুল হক প্রথম এই উদ্যোগ নেন। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করা হয়। যা বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২১ সালে।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন