বিজ্ঞাপন

‘হুমকি-ভয়-ভীতির কারণে উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে নারী শিক্ষার্থী’

March 21, 2024 | 8:05 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অহরহ যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের মতো লজ্জাজনক, চরম নীতিহীনতার ঘটনা ঘটছে। আর এ সবের বিরুদ্ধে সমাজের চলমান নীরবতার সংস্কৃতি চালু থাকায় অনেক ঘটনাই চাপা পড়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে, নানা ধরনের অন্যায় আচরণের কারণে, হুমকি-ভয়-ভীতির কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপ আর অসহায়ত্বের কারণে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহননের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে। সাম্প্রতিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত যৌন-নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে এ সংবাদ-সম্মেলন আয়োজন করে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে ২৩টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারীর প্রতি বিদ্বেষের সংস্কৃতি, ঘৃণার সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে চলেছে সর্বস্তরে। এটি অত্যন্ত আশঙ্কার বিষয়। গভীর উদ্বিগ্নতার সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, হুমকি-ভয়-ভীতির কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছেন।

অন্যদিকে, হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও যৌন হয়রানি প্রতিরোধের অভিযোগ কমিটি গঠিত হয়নি। কোথাও কোথাও কমিটি গঠিত হলেও সেসব কমিটি সক্রিয় নয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং অভিযোগ কমিটি সম্পর্কে শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনেকেই অবহিত নন, সচেতন নন।

বিজ্ঞাপন

এই পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সামাজিক বিদ্বেষ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ এবং এসব ঘটনার প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম, মানবাধিকার কর্মীসহ সকলের সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা পালন অনেক বেশি প্রয়োজন। যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে সরকার, প্রশাসন ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপদ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে কিছু দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। শিক্ষক নিয়োগের সময় ও তাদের কাজের মূল্যায়নের সময় আচার-আচারণের বিষয়টি মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি যৌন নিপীড়নের শিকার ভিকটিমের অভিযোগ করার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ও তাদের কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে ঘটনাগুলোর মনিটরিং করাসহ প্রতিষ্ঠানে থাকা যৌন নিপীড়ন কমিটির তৎপরতা বৃদ্ধি, ৫ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন ও দুই মাস পর পর কমিটির পরিবর্তন করতে হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানের মডারেটর ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিস্তারে নারী লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাদের মর্যাদা লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনসহ সবধরনের নির্যাতন একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি কেবল নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, এ ধরনের অপরাধে বিচার প্রক্রিয়া বলবৎ করার পাশাপাশি আইন অমান্য করার সংস্কৃতি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ কমিটির কার্যকারিতা তরান্বিত করাসহ এই কমিটির কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়বদ্ধতার ভূমিকা পালন করতে হবে এবং অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীর ব্যক্তি অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ৬৬ সংগঠনবিশিষ্ট সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি, জাতীয় নারী জোট’র প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী ও সম্পাদকমন্ডলীরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন