বিজ্ঞাপন

ভরা মৌসুমেও লোকসানের দুশ্চিন্তায় বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ীরা

April 11, 2024 | 5:04 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বান্দরবান: ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে বান্দরবানে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়। বছরঘুরে এসব উৎসব এলেও এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা বুকিং বাতিল করছেন। এতে ভরা মৌসুমে লোকসানের দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ি কন্যা খ্যাত বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে- রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলা।বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলাতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করায় দর্শনীয় স্থানে যাতায়ত করা পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচল সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছে।

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবারে ঈদ উপলক্ষে ২০ রমজান থেকেই বান্দরবানের সব হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ রুমার সোনালী ব্যাংক ডাকাতি,অস্ত্র লুট,ম্যানেজার অপহরণ এবং তার পরের দিন ৩ এপ্রিল দিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অস্থির হয়ে পড়েছে বান্দরবান। শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে একের পর এক শুরু বুকিং বাতিল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পর্যটক না আসার কারণে এই ঈদ মৌসুমে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের গুণতে হবে কোটি কোটি টাকার লোকসান।

জিপ-কার,মাইক্রো বাস চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন জানান, পাহাড়ে ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম হলো চাঁন্দের গাড়ি। যেখানে চাঁন্দের গাড়ির সংখ্যা রয়েছে পাঁচশ’র অধিক, চালক রয়েছেন ৭০০ জনের মতো। তাদের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটক, গাড়ির চাকা ঘুরলে সংসারের চাকা ঘুরে, কিন্তু বর্তমান কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে পাহাড় হয়ে উঠেছে অশান্ত। এমন পরিস্থিতিতে চাঁন্দের গাড়ি চালকরা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

বিজ্ঞাপন

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সেনাবাহিনী তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে কেএনএফের অনেক সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

তিনি বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা কঠোর হস্তে দমন করবো। খুব শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিসসংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে।

বিজ্ঞাপন

পরের দিন বুধবার (৩ এপ্রিল) থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়। রুমার ঘটনার পর যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী।

এর পর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ঘটনায় ৮টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাড়াঁশি অভিযান শুরু করে।

দুই দিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন