বিজ্ঞাপন

চেনা রূপের ঢাকায় যানজটে নাকাল নগরবাসী

April 24, 2024 | 12:17 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শবে কদর, ঈদুল ফিতর আর বাংলা বর্ষবরণ মিলিয়ে এবার ছিল টানা ছুটি। সে ছুটিও শেষ হয়েছে আট দিন আগে। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনও রাজধানীর সড়কে অনেকটাই ছিল স্বস্তি। তবে সে স্বস্তির সময় শেষ। রাজধানী ফের ফিরেছে চিরচেনা রূপে, চিরচেনা রূপে ফিরেছে যানজট।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীর প্রায় সব সড়কে গাড়ির ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটও লেগে যাচ্ছে কোনো কোনো সড়কে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো ছুটি থাকায় মূল সড়কে বেশিক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয়নি বলে জানিয়েছেন রাস্তায় চলাচলকারীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশ পথেই ছিল যানজট। এর মধ্যে যানবাহনের সবচেয়ে বেশি চাপ দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। এ ছাড়া সকাল থেকে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী সড়ক, কাকরাইল, মালিবাগ- মৌচাক, রামপুরা-বাড্ডা হয়ে বিশ্বরোড পর্যন্ত পুরো পথেই ছিল গাড়ির চাপ।

এদিকে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, বনানী, গুলশান-উত্তরা সড়কেও প্রচণ্ড গাড়ির চাপ দেখা গেছে। গণপরিবহণ ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও রাস্তায় অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

গুলিস্তান মোড় এলাকায় মিনি বাসের চালক ফারুক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, সকাল থেকে তিনটা ট্রিপ দিতে পেরেছেন। বন্ধন বাসের চালক মিরাজ বলেন, সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চারটা ট্রিপ দিতেই যানজট শুরু হয়ে গেছে। যানজট তীব্র আকার ধারণ করলে সময়মতো ট্রিপ দিতে পারেন না এবং এতে ব্যবসায় ক্ষতি হয় বলে জানালেন এসব বাসচালকরা।

এসব সিগন্যালে এখন সময় লাগছে গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক বেশি। ছবি: সারাবাংলা

তবে যানজটে পরিবহণসংশ্লিষ্টরা কেবল তো নয়, রাজধানীজুড়ে চলাচলকারী সবাইকেই পোহাতে হয় ভোগান্তি। অফিস বা স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে রাজধানীবাসীকে সড়কে ব্যয় করতে হয় দীর্ঘ সময়।

তেমন একজন সচিবালয়ের নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত রিফাত হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলেনি বলে ভেবেছি যানজটে হয়তো পড়তে হবে না। সেভাবেই বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। কিন্তু বেরিয়েই বুঝতে পারলাম, ভুল করেছি। এক ঘণ্টা লেট হয়েছে অফিসে পৌঁছাতে।’

বিজ্ঞাপন

যানজট পরিস্থিতি জানতে চাইলে জিপিও মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, রাস্তায় চাপ আছে। অফিস-আদালত তো খোলা। তার ওপর ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। সব মিলিয়ে কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় চাপ বাড়ছে। আজ (বুধবার) যানজট একটু বেশিই সহ্য করতে হচ্ছে।

এই ট্রাফিক কর্মকর্তা সামনের সপ্তাহের জন্য সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, স্কুল-কলেজ খুললে গাড়ির চাপ তো শুরু হবে ২৮ এপ্রিল থেকে। এখন তো সড়কে বাস বা গণপরিবহণ বেশি। তখন ব্যক্তিগত গাড়িও অনেক বেড়ে যাবে। যানজটও বাড়বে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু থেকে শুরু করে অতি তীব্র পর্যন্ত মাত্রায় তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাতেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর সঙ্গে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় অস্বস্তি হচ্ছে বেশি। যানজটের সঙ্গে এই বিরূপ আবহাওয়া জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

যানজটের সঙ্গে তীব্র গরম আরও ভোগান্তি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবীদের কষ্টটা অনেক বেশি। ছবি: সারাবাংলা

গুলিস্তানে কথা হয় হাবিবুর রহমান নামে একজনের সঙ্গে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাবেন, উৎসব বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। হাবিবুর বলেন, ‘বাসের জন্য আধা ঘণ্টা ধরে এই তীব্র রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস এখনো পৌঁছায়নি। কাউন্টার থেকে বলল, বাস যানজটে আটকে রয়েছে। এখন শুধু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

ফুটপাথের দোকানি সেলিম বলেন, রোদের এত তাপ যে দোকানে বসে থাকা মুশকিল হয়ে গেছে। রোদ বেশি হলে দোকানে কাস্টমারও কম আছে। আমাদের খালি লস আর লস।

এদিকে ঈদের ছুটি ১০ দিন আগে শেষ হলেও বুধবারও অনেককে ঢাকা ফিরতে দেখা গেছে। রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল— সবখানেই ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের পরের দিকে যারা বাড়িতে গিয়েছিলেন, তারাই মূলত এখন ফিরছেন বলে জানাচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহণসংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন