বিজ্ঞাপন

দোভাষের বিদায়, সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ

April 24, 2024 | 6:37 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোহাম্মদ ইউনুছকে তিন বছরের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ পদে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা মোহাম্মদ ইউনুছকে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিকেলে তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে যোগদান করেন।

সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’

জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইউনুছ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এক মুহূর্ত সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নই। প্রজ্ঞাপন হওয়ার পরেই আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে যোগদান করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে সিডিএ’র সব পদস্থ অফিসারকে ঢাকায় ডাকা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় এবং আমার উপস্থিতিতে কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হবে। সেটা শেষ করেই আমি চট্টগ্রামে ফিরে আসব। আগামী রোববার আমি সিডিএ কার্যালয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী কাউকে ফুল দিয়ে বিব্রত না করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘সর্নিবন্ধ অনুরোধ, আমাকে যেন কেউ ফুল দিতে না আসেন। এতে আমি খুবই বিব্রতবোধ করব। আমার মেয়াদ তিন বছর। সবাইকে অনুরোধ করব, আগে তিন বছর আমার কাজ দেখুন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন আমাকে ফুলের মালা না কি জুতার মালা দেবেন। আগেভাগে ফুল দিয়ে কেউ আমাকে বিব্রত করবেন না, সাংবাদিকদের মাধ্যমে এটা আমি অনুরোধ করছি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পীর সই করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ৭ ধারা অনুযায়ী মোহাম্মদ ইউনুছকে তিন বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

২০০৯ সালে সিডিএ চেয়ারম্যান পদে প্রথম রাজনৈতিক নিয়োগ পান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। দফায় দফায় মেয়াদ বেড়ে টানা দশ বছর দায়িত্ব পালনের পর ছালাম বিদায় নেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম দফায় দুই বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দোভাষ। আরও দুই দফায় মোট ছয়বছর দায়িত্ব পালনের পর তিনি বিদায় নিলেন। সংশোধিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী, একই ব্যক্তির ছয় বছরের বেশি টানা দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই।

ফলে নতুনভাবে সিডিএ চেয়ারম্যানের চেয়ারে আসতে যাচ্ছেন মোহাম্মদ ইউনুছ, যিনি প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সমধিক খ্যাত। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মোছলেম উদ্দিন (বর্তমানে উভয়ে প্রয়াত) এবং ইউনুছ মিলে চট্টগ্রামে তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমান্ডারের বাসভবনে দুঃসাহসিক আক্রমণ চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। বন্দি অবস্থায় অমানুষিক নির্যাতন সয়েছিলেন তারা। একপর্যায়ে ‘পাগল’ সেজে হানাদারবাহিনীর বন্দিশালায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে চলে গিয়েছিলেন রণাঙ্গনে।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিশোধ নিতে মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে যে ক’জন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, ইউনুছ তাদের একজন।

বিজ্ঞাপন

ইউনুছের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও একসময় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দীর্ঘসময় রাজনীতিতে পদ-পদবিবিহীন অবস্থায় থাকেন। তবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের’ মহাসচিব। চট্টগ্রামে সিআরবিতে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে নেতৃত্বের কাতারে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ইউনুছকে জাতীয় পরিষদের সদস্য করে।

সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর সারাবাংলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘যারা দেশের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য মাঠে-ময়দানে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করেছে, সংগ্রাম করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা তাদের ভুলে যাননি। তাদের মূল্যায়ন করে রাস্তা থেকে তুলে এনে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে আবার যুদ্ধে নামিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমি মোহাম্মদ ইউনুছ। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন