বিজ্ঞাপন

‘সড়ক পরিবহণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা চাঁদাবাজি’

April 24, 2024 | 9:11 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সড়ক পরিবহণ খাতে প্রকাশ্যে বিভিন্ন নামে ও অজুহাতে চাঁদাবাজিকে এই খাতের শৃঙ্খলায় সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মনে করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলছেন, সারা দেশেই সড়কে চলে এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। আর এটিই সড়ক পরিবহণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার ১০টি প্রধান কারণ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি; এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

আরও পড়ুন- রোড সেফটির প্রতিবেদন: ঈদযাত্রায় ১৫ দিনে ৩৬৭ প্রাণহানি

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহণ মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রযোগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

সুপারিশ আরও বলা হয়— গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটসাইকেল ব্যবহার নিরৎসাহিত করতে হবে; ঈদের আগে-পরে সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে নিত্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের ধারাবাহিকতা নেই। সবকিছু চলছে দায়সারাভাবে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন অধ্যাপক মাহবুব। তিনি বলেন, ৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত ও দেড় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এবারের ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচটি পরিবার পরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত হয়েছেন ৭৪ জন।

ড. মাহবুব আরও বলেন, এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। গত বছরে ঈদুল ফিতরে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ২৮৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৪টি দুর্ঘটনায় ২০ দশমিক ৩৫ জন নিহত হয়েছিলেন। এ বছরে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ২৩ দশমিক ৮৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ দশমিক ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এই হিসাবে এ বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় এক হাজার ৩৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে বলে এ হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ পরিমাণ যোগ করতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের পদ্ধতি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনার এই হিসাব করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রোপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রোপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। তারা আরও বলছেন, গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত দুর্ঘটনার সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক হাসিনা বেগম, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মো তৌফিকুজ্জামান, রিসার্চ অ্যান্ড ডিজিটাল ইন্টারভেনশন এক্সপার্ট আমিনুর রহিম প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন