বিজ্ঞাপন

রোড সেফটির প্রতিবেদন: ঈদযাত্রায় ১৫ দিনে ৩৬৭ প্রাণহানি

April 24, 2024 | 7:30 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৫ দিনে ঈদযাত্রায় ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৬৭ জন। ৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল সময়ের মধ্যে এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি। সে হিসাবে এই সময়ের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন সড়কে নিহত হয়েছেন ২৪ জনেরও বেশি, আহত হয়েছেন শতাধিক। এ সময়ে তিনটি নৌ দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ এপ্রিল) নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঈদের আগে-পরের ১৫ দিনের দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

এর আগে যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত শনিবার (২০ এপ্রিল) ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে। তাদের হিসাব বলছে, ৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ঈদযাত্রায় দেশে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন হয়েছেন।

আরও পড়ুন- ঈদযাত্রায় সড়কে নিহত ৪০৭

বিজ্ঞাপন

এর পরদিনই (রোববার) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তাদের হিসাবে জানায়, ৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ দিনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৮৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২০ জন, আহত হয়েছেন আরও ৪৬২ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে, যেখানে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও বিআরটিএর মাঝামাঝি।

অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, গণমাধ্যমে ঈদযাত্রার সড়ক দুর্ঘটনাগুলোতে ৪৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ঈদের তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কেবল ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেই (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি হয়েছেন ৪৫৪ জন, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত। এ বাস্তবতায় ১৫ দিনে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি হবে।

আরও পড়ুন- ঈদযাত্রায় নিহত ৩২০, যাত্রী কল্যাণের হিসাব অগ্রহণযোগ্য: বিআরটিএ

বিজ্ঞাপন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, এসব সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যা মোট দুর্ঘটনার ৫১ দশমিক ১১ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৬৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪১ জন (১১ দশমিক ১৭ শতাংশ)।

একটি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন, দুর্ঘটনার ধরনসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান

ঈদযাত্রায় কোন বাহনের আরোহীদের মধ্যে নিহত কত। ছবি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন

দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫৬ জন (৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ), বাস যাত্রী ১৮ জন (৪ দশমিক ৯০ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক্টর আরোহী ২৬ জন (৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-পাজেরো-জিপ আরোহী ২৮ জন (৭ দশমিক ৬২ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৫৮ জন (১৫ দশমিক ৮০%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন-মাহিন্দ্র) যাত্রী ৯ জন (২ দশমিক ৪৫ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী চারজন (১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ)।

বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে দুর্ঘটনার সংখ্যা মোট দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ঘটেছে মোট প্রাণহানির ৩০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে— ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রাণহানিও এ বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে বরিশাল বিভাগে প্রাণহানি ঘটেছে ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৬ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে।

একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও লালমনিরহাট জেলায়। এই চারটি জেলায় স্বল্প মাত্রার কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। আর রাজধানী ঢাকায় এ সময়ে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার ধরন

ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন। ছবি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৩টি (২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৮টি (৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭২টি (২০ দশমিক ১১ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ ধাক্কা দেওয়া, ৪১টি (১১ দশমিক ৪৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা ও ১৪টি (৩ দশমিক ৯১ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার সময়

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা চার ভাগের এক ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটেছে রাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে। এ ছাড়া বিকেলে ১৯ শতাংশ, দুপুরে ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ভোরে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের সংখ্যা

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের চিত্র। ছবি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মোট সংখ্যা ৬৫৭টি। এর মধ্যে বাস ৮২টি, ট্রাক ৫৯টি, কাভার্ড ভ্যান ১১টি, পিকআপ ২৮টি, ট্রলি ১০টি, লরি সাতটি, ট্রাক্টর ছয়টি, রেডিমিক্স গাড়ি একটি, মাইক্রোবাস ১৩টি, প্রাইভেটকার ২৪টি, অ্যাম্বুলেন্স তিনটি, পাজেরো জিপ একটি, মোটরসাইকেল ২১৪টি, থ্রি হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, মিশুক, লেগুনা) ১৩৪টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র, পাওয়ার টিলার) ৩৫টি, বাইসাইকেল ও রিকশা ১৭টি এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১২টি।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন