বিজ্ঞাপন

সাপ নিয়ে ভয় নয়, সচেতন হোন

June 16, 2024 | 1:09 pm

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

কেউ বললেই হলো সাপ; অমনি ভয়ে মানুষ কেঁপে ওঠে। কিছু অতি উৎসাহী মানুষ আবার লাঠি নিয়ে মারতে যান। মারতে পারলে তো কথাই নেই। এ যেন বিরাট কৃতিত্ব। হোক সে নির্বিষ সাপ। এখন আবার সাপ নিয়ে নতুন আতঙ্ক, রাসেল ভাইপার। এই সাপ একবার কামড়ালেই শেষ। সাপ নিয়ে আতঙ্ক একেবারে অযৌক্তিক নয়। তবে মানুষের মনে সাপ নিয়ে কত ভয়; অথচ সাপ আসলে ততটা ভয়ের নয়। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েক ধরনের সাপ আছে, যেগুলো কামড়ালে বিপদ হতে পারে। অবশ্য সঠিক চিকিৎসা নিলে তাও হবে না।

বিজ্ঞাপন

সাপ নিয়ে জনমনে এত ভয় কেন? বাংলা সিনেমাসহ নানা মাধ্যমে মানুষ জেনেছে, সাপ মানেই খুব ভয়ংকর প্রাণী। ওঝা, কবিরাজরাও সাপকে ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করে থাকে। এ কারণে সাপ দেখলেই মানুষ মারতে আসে। অথচ দেশের অধিকাংশ সাপই নির্বিষ। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সম্পর্কে সবাইকে পরিচিত করার মাধ্যমে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সচেতনতামূলক সেমিনার করে সাপ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হবে। তবেই মানুষের মনের ভয় দূর করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে বিষধর সাপের মধ্যে খৈয়া গোখরো, পদ্ম গোখরো, রাজ গোখরো, কালাচ, ছোট কৃষ্ণ কালাচ, বড় কৃষ্ণ কালাচ, ওয়ালস ক্রেইট, শাখামুটি, চন্দ্রবোড়া, পিট ভাইপার, লালগলা ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া অল্প বিষধর সাপের মধ্যে আছে মেটে সাপ, লাউডগা, ডগ ফেসড ওয়াটার স্নেক, কালনাগিনী, ফণিমনসা, খয়রি ফণিমনসা সাপ ইত্যাদি। নির্বিষ সাপ হলো জলঢোঁরা, পেইন্টেড কিলব্যাক, হেলে, বেত আচড়া, দুধরাজ, ব্রাহ্মণী দুমুখো সাপ, উদয়কাল, ঘরগিন্নি সাপ, ইন্দো চাইনিজ দাঁড়াশ, রেড কোরাল কুকরি ইত্যাদি। দেশে ব্ল্যাক ব্যান্ডেড সি স্নেক, ইয়োলো লিপেড সি স্নেক, হুক নোসড সি স্নেক, ডাউডিন সি স্নেক ইত্যাদি সামুদ্র্রিক সাপ পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে সাপ নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার রয়েছে। বীণ বাজিয়ে সাপ আনা, সাপ দুধ খায়, দাঁড়াশ সাপ মারাত্মক বিষধর-লেজ দিয়ে বাড়ি দিলে মানুষ বাঁচে না, বাড়ি দেওয়ার স্থান পচে যায়, সাপ মানুষকে চিনে রাখে, আঘাত করলে রাতে বাসায় এসে কামড় দেয়, সাপ কামড়ালে ওঝা ভাল করতে পারে ইত্যাদি হলো কুংসস্কার। সাপের কামড় বিষয়ে প্রথম জাতীয় জরিপে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ৬ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর কামড়ের শিকার হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যান মাত্র ৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সাপের কামড়ের চিকিৎসায় মূলত দুই ধরনের এন্টিভেনম ব্যবহার করা হয়। এক. পলি ভেনম। দুই. মনো ভেনম। পলি ভেনম হলো-যে কোনো বিষধর সাপই কামড় দিক, সব সাপের ক্ষেত্রে পলি ভেনম দেওয়া হয়। এটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু সব সময় পলি ভেনম কার্যকর ভূমিকা রাখে না, অনেক সময় কাজ হয় না। মনো ভেনম হলো-যে সাপ কামড়ায়, সেই সাপের বিষ দিয়ে তৈরি এন্টিভেনম। এটি বর্তমানে ভিআরসিতে তৈরির কার্যক্রম চলছে। এটি তৈরি হলে দেশে সাপের চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি হবে।

সাপের বিষের প্রতিষেধক প্রতিটি উপজেলায় নেই। সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় আইসিউ প্রয়োজন। তাও নেই। প্রতিটি উপজেলায় সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় প্রশিক্ষপ্রাপ্ত একজন হলেও চিকিৎসক থাকা দরকার। সাপ দেখলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। ছোটাছুটি করলে বরং বিপদ বেশি হতে পারে। কারণ, সাপ স্থির বস্তু ঠিকমতো দেখতে না পেলেও আশপাশে কোনো প্রাণীর নড়াচড়া, ছোটাছুটি করলে সাপ সেই প্রাণীর অবস্থান বুঝে ফেলতে পারে এবং যে কোনো মুহূর্তে ছোবল দিতে পারে। যে ঘরে সাপ দেখা যাবে। সেখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে হবে। যারা সাপ উদ্বার করে, তাদের খবর দিতে হবে।

বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায়, তার মধ্যে অনেক সাপ ‘ড্রাই বাইট’ করে অর্থাৎ কামড় দিলেও বিষ ঢেলে দেয় না। বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১০০ মিনিট অত্যন্ত মূলবান। কোনোভাবেই সাপুড়ের কাছে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সাপুড়ে কখনো বিষ নামাতে পারে না। চুষে বিষ নামানোর মতো ভণ্ডামি আর নেই। কামড়ের জায়গার ওপরে কোনোভাবেই রশি দিয়ে বাঁধা যাবে না। গামছা বা ওড়না দিয়ে এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে সহজেই বাঁধনের ভেতর দিয়ে আঙুল ঢুকানো যায়। রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধলে সেই জায়গায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সাপের বিষের চেয়ে বেশি যন্ত্রণা হতে পারে। আর কোনো কারণে এ বাঁধন ৬ ঘণ্টার বেশি থাকলে সেই জায়গা পঁচে গিয়ে অঙ্গহানি ঘটতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সাপে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব হাতের আংটি, চুরি, কানের দুল এগুলো খুলে ফেলতে হবে। কেননা, বিভিন্ন সাপের কামড়ে সেই স্থান ফুলে যায়। সাপ উদ্ধারে দেশে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। কিছু ব্যক্তি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাপ উদ্বার করে বনে ছেড়ে দেন। বনবিভাগের আসলে তেমন জনবল নেই, যারা লোকালয়ে আসা বিপদগ্রস্ত সাপগুলোকে বাঁচাতে পারে। ব্যক্তি ও সংগঠনের যারা উদ্ধার কার্য পরিচালনা করেন, তাদের সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। এ সাহায্য দুভাবে দেওয়া যেতে পারে। এক. টেকনিক্যাল। তাদেরকে সাপ উদ্বারের প্রশিক্ষণ দেওয়া, আধুনিক সরঞ্জাম দেওয়া। দুই. আর্থিক সহয়তা প্রদান। কারণ, সাপ উদ্ধার করতে যেতে যাতায়াত খরচ আছে।

একটা দাঁড়াশ সাপ কয়েক একর জমির ফসল রক্ষা করে ইঁদুর খেয়ে। প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ সাপ। অকারণে সাপ মারা কোনো বাহাদুরি নয় বরং কাপুরুষত্ব। সাপ উদ্ধারকারীদের সহায়তা প্রদান ও সাপ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: বেসরকারি চাকুরিজীবি

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন