বিজ্ঞাপন

ব্রাজিল ও বাংলাদেশের ফুটবল তফাত

June 25, 2018 | 10:20 pm

।।জাহিদ-ই-হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

তুলনাটা হয়তো আকাশ-পাতাল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়েও পার্থক্য আসমান-জমীন। শুধু ‘ব’ দিয়ে দুই দেশের নামের শুরু ছাড়া আর কোনও মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে, একটা বিন্দুতে অভিন্ন দুটি দেশই। সেটা হলো দুই দেশই প্রচণ্ড ফুটবল পাগল।

প্রশ্নের বিষয় কেন এ পার্থক্যের বিশ্লেষণে নেমেছে সারাবাংলা। সেটার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আসা এক সাংবাদিকের মুখেই। ফুটবল পাগল দুই দেশের ফুটবলার তৈরির ধরন, দেশের অবকাঠামো আর ফুটবল সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করবে সারাবাংলা।

ব্রাজিলের সাংবাদিকরা বাংলাদেশে আসার কারণ কি?

বিজ্ঞাপন

দেশটির জনপ্রিয় গ্লোবো টিভির সাংবাদিক ইগো তাভারেজ জানালেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ব্রাজিল ফুটবল নিয়ে অনেক সচেতন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্রাজিলের সমর্থক অনেক বেশি। এদেশে ব্রাজিলের বিভিন্ন ফুটবলারদের জার্সি পড়তে দেখা যায় অনেক বেশি। পতাকা-ব্যানার দেখতে পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন শহরে। সেই বিষয়টাই বিস্মিত করেছে আমাদের। তাই আসা। ব্রাজিল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনা অনেক।’

এর আগে ‘দেশের ফুটবল নিয়ে কতটুকু সচেতন তরুণরা?’ এমন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছিল সারাবাংলা। সেখানে ফুটবল প্রেমি ১২ জনের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছিল। ১২ জনই বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ নাম বলতে পারেনি। তবে দু-একজন দেশের এক দুইজন ফুটবলারের নাম বলতে পেরেছে।

তবে, বেশিরভাগই ইউরোপিয়ান ফুটবলের খোঁজ খবর রাখে। কে কোন দলে খেলে সেটাও নখদর্পনে অনেকের। বেশিরভাগ ফুটবল ভক্ত দেশের ফুটবল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আশঙ্কাটা অমূলক নয়। ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তখন ১৯৭ ছিল। বর্তমানে ১৯৪। যেখানে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১১৬!

বিজ্ঞাপন

সেটাই আসলে ভাবিয়ে তোলে দেশের ফুটবল সমর্থকদের। বেশিরভাগের মুখে আকুতি-কোন ফুটবল একাডেমি নেই দেশে। এবং ক্লাব সংস্কৃতি এখন শুধু স্মৃতি।

তবে ব্রাজিলে ‍দৃশ্যটা বাংলাদেশের একেবারে উল্টো জানালেন তাভারেজ, ‘ব্রাজিলে ক্লাব সংস্কৃতি অনেক শক্তিশালী। ক্লাবই ফুটবলারদের তৈরি করে দেয়। দেশজুড়ে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন লিগ আছে যেটা সারাবছর নিয়মতান্ত্রিকভাবে আয়োজিত হয়ে থাকে।’

বাংলাদেশে উঠতি তারকা থাকলেও তাদের নার্চারের জন্য নেই কোন একাডেমি। নেই কোনও ক্লাব সংস্কৃতি। ক্লাবগুলোর বেশিরভাগের বয়সভিত্তিক একাডেমি নেই। যার কারণে উঠতি ফুটবলার তৈরি হলেও তাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে, ব্রাজিলে এসব উঠতি ফুটবলারদের নিয়ে কি হয় শুনুন তাভারেজের মুখেই, ‘ব্রাজিলের প্রত্যেক শহরে ছোট বেলা থেকেই শিশুরা ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকে। আমাদের দেশের প্রচুর লিগ আছে। প্রত্যেকটা শহরে ক্লাব আছে। একটা ক্লাবের অনেকগুলো একাডেমি আছে। সবারই নজর থাকে উঠতি খেলোয়াড়ে। সেটা যে বয়সেই হোক না কেন। তাই ছোটবেলাতেই গরীব-ধনী ফুটবল ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া এই ফুটবলারদের দিকেই নজর থাকে ক্লাবগুলোর। তারা ফুটবলারদের একাডেমিতে নিয়ে নেয় সঙ্গে সঙ্গে। তাই এরা শুরু থেকেই এমন পরিবেশ পেয়ে যায়। ছেলে কি মেয়ে কোনও পার্থক্য নেই। সবাই জন্ম হওয়ার পরপরই একটা ফুটবল উপহার পায়।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে ব্রাজিলের সাংবাদিকরা

দেশের ফাহিমদের মতো ফুটবলার তৈরি হয়েও হারিয়ে যায় সঠিক পরিচর্যার অভাবে। যার ফলে পাইপলাইনে ফুটবলার সংকট একটি কারণ বলে থাকে ফুটবল বিশ্লেষকরা।

তবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল দলগুলোর একটি ব্রাজিল। তাভারেজ জানান,‘আরেকটি বিষয়- ব্রাজিল থেকে প্রচুর ফুটবলার এ জন্য বিদেশে খেলতে চলে যায়। প্রচুর ফুটবলার তৈরি হয় এ দেশে। এর পেছনে কারণ একাডেমিগুলো। ব্রাজিলে হাজারো স্থানীয় একাডেমি যারা অনেক জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। প্রত্যেক ক্লাবের বয়সভিত্তিক একাডেমি আছে। বয়সভিত্তিক ফুটবলার আছে। আবার সেই একাডেমিগুলো ফুটবলারদের তৈরি করে আরও বড় ক্লাবে সুযোগ তৈরি করতে সহযোগিতা করে।’

ক্লাব সংস্কৃতিই বড় পার্থক্য এই দুই দলের। একাডেমি ভিত্তিক ক্লাব সংস্কৃতি না থাকলে আশঙ্কা আরও বাড়বে বৈ কমবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি জানান, যতদিন দেশে ক্লাব সংস্কৃতি ও উন্নত একাডেমি তৈরি না হবে এই ফাহিম-জাফর ইকবালদের মতো উদীয়মান খেলোায়াড়রা হারিয়ে যাবে।’

সেই আশঙ্কাটি কি অমূলক?

আরও পড়তে পারেন

দেশের ফুটবল নিয়ে কতটুকু সচেতন তরুণরা?

সারাবাংলা/জেএইচ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন