বিজ্ঞাপন

উৎকণ্ঠায় শুরু খুলনার ভোট

May 15, 2018 | 8:28 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

খুলনা থেকে : উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে শিল্প নগরী খুলনায়। সকাল ৮টায় নগরীর ২৮৯ টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে ৮টার আগেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু মিয়াপাড়া এলাকার রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

এদিকে, ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে নগরীর ঝুকিপূর্ণ ২৩৪ কেন্দ্রের ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে নগরীর পোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সোহেল আহমেদ। তিনি জানান, সকাল সকাল ভোট দিয়ে কাজে যাব। ঝামেলা আগে শেষ হওয়া ভাল।

এদিকে, বয়রা মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ভোটার শামসুল হক জানান, ভোট কারচুপির আশঙ্কা করছি। তাই আগে ভাগেই কেন্দ্রে এসেছি। বলা যায়না আমার ভোট আবার কে দিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে রোববার দিবাগত রাত ১২টায়। একই সঙ্গে বহিরাগতদের শনিবার রাত ১২টার মধ্যে সিটি এলাকা ত্যাগ করেছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত রোববার বিকেল থেকে ১৬ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামে।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন— আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

তাছাড়া মহানগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন। এ নির্বাচনে ২৮৯টি ভোট কেন্দ্র। এর মধ্যে দুটি ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। এ দুটি কেন্দ্রের ১০টি বুথে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন দুই হাজার ৯৭৮ ভোটার। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী জানান, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন বলেন, নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি ভোট কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটের দিন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি, এপিপিএনের প্রায় ১০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খুলনা শহর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম দুটি নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি থেকেই।তবে ২০০৮ সালে তৃতীয় নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনেন আওয়ামী লীগের খালেক। এই নগরীর দৃশ্যমান বেশিরভাগ উন্নয়নই খালেক মেয়র থাকাকালেই হয়েছে। তবে ২০১৩ সালে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনির কাছে ৬১ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি। মেয়র হিসেবে মনি খুলনার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে সমালোচনা আছে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেন কেউ কেউ।

বিশেষ করে সচেতন তরুণ ভোটাররা বলছেন, মেয়র পদটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত এ পদটিকে তার প্রাপ্য অনুযায়ি সুবিধা দেওয়া উচিত। জাতীয় রাজনীতির বিভেদ সামনে রেখে কেবল বিরোধী পক্ষের নেতা হওয়ার কারনে তাকে কাজ করতে না দিলে তা জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রভাব ফেলে।

বিজ্ঞাপন

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হবে তরুণ ভোটাররা। এ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া ৫২ হাজার ৫২৭ তরুণ ভোটার হাতেই আগামী দিনের নগরপিতার ক্ষমতার চাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারাই কেসিসি নির্বাচনের ফলাফলে মূল ভূমিকা পালন করবেন। অপরদিকে প্রায় ৮০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন এই সিটিতে। ভোটের ফলাফলে তাদের গুরুত্বও অনেক। একই সাথে ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ভোটররাও প্রভাব ফেলবে জয়-পরাজয়ে।

গত ৩১ মার্চ কেসিসি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৫-১৬ এপ্রিল হয় যাচাই-বাছাই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৩ এপ্রিল। এদিন আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন প্রার্থীরা।

সারাবাংলা/এমএস/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন