বিজ্ঞাপন

পদদলিত হয়ে ৯ নারীর মৃত্যু: শিল্পপতি শাহাজানের বিরুদ্ধে মামলা

May 15, 2018 | 12:43 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৯ নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি কবির স্টিল রিরোলিং মিলস লিমিটেডের (এমডি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

মঙ্গলবার (১৫ মে) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে নিহত হাসিনা আক্তারের স্বামী মোহাম্মদ ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তাদের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) (অবহেলাজনিত মৃত্যু) ও ৩৪ (হত্যায় সহায়তা দেওয়া) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় শাহজাহানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের সম্পৃক্ত অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা নেওয়া হবে।

কেএসআরএম-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাতিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাঙ্গরমুখ এলাকায়। বাড়ির পাশে কাদেরীয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার মাঠে সোমবার (১৪ মে) সকালে ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করে কেএসআরএম গ্রুপ, যাতে উপস্থিত ছিলেন শাহজাহান নিজেও। সেখান থেকে করুণ মৃত্যুর শিকার ৯ নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরবর্তীতে নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯ নারীর মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার পর চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার মাঠে ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক জড়ো হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। ভিড়ের মধ্যে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। কেএসআরএম’র পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়।

তবে মঙ্গলবার এসপি নূরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেছেন, ঘটনার খবর শুনে তিনি দ্রুত সেখানে যান। তাদের মনে হয়েছে, প্রচণ্ড ভিড় এবং ভ্যাপসা গরমের মধ্যে পদদলন, হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসরোধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা কেএসআরএম’র অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। কারণ তারা এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ইফতার সামগ্রী বিতরণের প্রচার করেছিল। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া এলাকা থেকেও লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। অথচ বিষয়টি তারা ‍উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশকে লিখিতভাবে অবহিত করেনি। ৩০-৩৫ হাজার লোক সমাগমের জন্য অন্তত ৩শ’ থেকে ৪শ’ পুলিশ দরকার। আগে থেকে অবহিত না করায় সেখানে আমাদের টিম ছিল না। তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী যারা ছিলেন তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। কারণ মাঠের গেটটা এত সংকীর্ণ ছিল যে সেখানে ৩০-৩৫ হাজার লোক প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কেএসআরএম’র গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট। কারণ তারা ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজনের বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও জানায়নি। আমাকেও জানায়নি। পুলিশকে আগে থেকে বলা হয়েছে কি না সেটা এসপি সাহেব জানেন। তবে আমি যেটা জানতে পেরেছি, পুলিশ ঘটনার পর থানা থেকে মুভ করেছিল। ঘটনার আগে সেখানে কতজন পুলিশ ছিল সেটাও তদন্তে উঠে আসবে। ঘটনাটি কি হিটস্ট্রোক নাকি পদদলন সেটাও তদন্তে বের হবে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এর প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাশহুদুল কবীরকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেনকে। এছাড়া কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ন কবির, সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হাসান মোল্লা এবং সাতকানিয়া নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তারকে।

মাশহুদুল সারাবাংলাকে বলেন, কমিটির সদস্যদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সম্ভব হলে আজই আমরা বৈঠকে বসে তদন্তের কর্মপরিধি নির্ধারণ করব। এরপর মাঠের তদন্ত শুরু হবে।

আরও পড়ুন

সাতকানিয়ায় ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে ৯ নারী

সাতকানিয়ায় প্রাণহানির ঘটনায় তদন্ত কমিটি

সারাবাংলা/আরডি/আইএ/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন