বিজ্ঞাপন

বিএনপি ভোটে না এলে কিছু করার নেই: প্রধানমন্ত্রী

September 2, 2018 | 5:18 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছে। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক। কিন্তু কেউ যদি নির্বাচনে না আসে এটি তাদের দলের সিদ্ধান্ত। নির্বাচন হবে, এখন এই নির্বাচনে কে এলো কিংবা এলো না এটি দেখার বিষয় না। বিএনপিকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই, দাওয়াত দেওয়ারও কিছু নেই।’

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন আরটিভির সাংবাদিক মামুনুর রহমান খানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

নেপালের কাঠমান্ডুতে দুইদিন ব্যাপী চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বিমসটেক সম্মেলনের নানা বিষয় নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই অনুপ্রেরণা থেকেই বিমসটেকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশা করি, আমাদের এই অগ্রযাত্রায় দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম আমাদের পাশে থাকবে।’

লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাংবাদিক মামুনুর খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, ১ সেপ্টেম্বর নয়া পল্টনে সমাবেশ করেছে বিএনপি। তারা খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া বিমসটেক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না?

বিজ্ঞাপন

এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তো আমরা গ্রেফতার করিনি। তার পছন্দের লোক যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিল তখন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে তো রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং সেই মামলা গত ১০ বছর ধরে চলেছে। তিনি জেলে গেছেন এতিমের টাকা চুরি করে খেয়ে। আমরা যদি হস্তক্ষেপ করতাম তাহলে তো ১০ বছর এই মামলা চলত না।’

‘এখন তাকে যদি বের হতে হয় তাহলে তো কোর্টের মাধ্যমে বের হতে হবে। কিংবা তিনি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। এটাই তো নিয়ম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরে তারাই তো অগ্রাধিকার পায়। আমি আজও কয়েকটি টেলিভিশনের খবর দেখেছি। সেখানে দেখি আমি ৩/৪ নম্বরে। তারা পার্লামেন্টে নেই, তারা বৈধ বিরোধী দলও না। তবুও আমি চার-পাঁচে এসে ঠেকি।’

‘অনেক মানুষ আছে তারা চুরি করলেও ভালো, ডাকাতি করলেও ভালো, খুন করলেও ভালো। আমাদের সমাজে এরকম মানুষের অভাব নেই। যত দোষ আমাদের। আমাদের পান থেকে চুন খসতে পারবে না। কিছু একটা হলেও খাও খাও করে ধরবে। আমাদের অপরাধ হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে যাত্রা শুরু করে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। ভিয়েতনামের যেটা লেগেছে ৩০ বছর।’

বিজ্ঞাপন

‘বিএনপি’র এত হোমরা-চোমরা ব্যারিস্টার তারা কেন প্রমাণ করতে পারল না খালেদা নির্দোষ। খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি যখন দেখা করতে গেলাম তখন মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের সঙ্গে আমি আর আলোচনায় বসব না। যে যা বলুক তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। আমারও আত্মসম্মান বোধ আছে। সে আমি ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি। তারা নির্বাচনে এলে আসবে, জোর করার কিছু নেই।’

রোহিঙ্গা সংকটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গত জুলাই মাসে একটি বই প্রকাশ করে, যেখানে তিনটি ভুয়া ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর দুই বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের একটি ছবি ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর বইয়ে ক্যাপশনে বলা হয়েছে- সেটা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত স্থানীয় বৌদ্ধদের ছবি।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এর দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সাত দেশের জোট বিমসটেকের সদস্য হলেও দেশটির নেত্রী সু চি এবার বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যাননি। তার বদলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট।

ছবিতে মিয়ানমারের অপপ্রচার সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশেও এই ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি জামায়াতের কাছে শিখল কি না সেটাই প্রশ্ন। ২০১৩-১৫ বিএনপি অপপ্রচার চালিয়েছিল। মিয়ানমার জঘন্য কাজ করেছে। নিজেরা নিজেদের সম্মান নষ্ট করেছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। বিএনপি সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আমরা অনুশীলন করে দেখেছি কোনোটা কাজে লাগে না। যারা ক্ষমতায় বসে তারা আর সরতে চায় না। কেয়ারটেকার তাদের রূপ আমরা দেখলাম। অনির্বাচিত সরকার এ দেশে থাকতে পারবে না।’

৩১ আগস্ট নেপালে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক)’র চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সফরকালে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন এবং শুক্রবার সকালে সমাপনী অধিবেশনসহ সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। বিমসটেকভুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেন ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যও রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন শুরু হয়। নেপালের জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনের মধ্যে শুরু হয় সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ও-চার, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন।

কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বিকালে সাতটি দেশের আঞ্চলিক এই জোটের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। শুক্রবার সকালে বিমসটেকের সমাপনী অনুষ্ঠানসহ রিট্রিট সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।

এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। অন্য দুটি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বিশ্বায়নের আগ্রাসন মোকাবেলা করে আঞ্চলিক সম্পদ এবং ভৌগোলিক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে সবার স্বার্থে পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এই ধরনের জোট গঠনের উদ্দেশ্য।

সারাবাংলা/এটি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন