বিজ্ঞাপন

‘এদেশে পজিটিভ ক্রিটিসিজম নেই’

December 7, 2017 | 12:47 pm

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

নব্বই দশকের বিকেল ধরে বেড়ে ওঠা কিশোরের বিষাদ সঙ্গীর নাম মেহরীন মাহমুদ! তিনি গাইতেন, তার কণ্ঠে ঝরতো জোৎস্না রাতের উত্তাপ। ওসব যেন গান নয়, মৌন কথোপকথন। একদা উৎসব দিনে প্রেমিকা হারানো যুবক বাড়ি ফিরতো তার অ্যালবাম কিনে। তবে সেই সময় ‘বোধহয়’ গত হয়েছে! এখন বছর ঘুরে উৎসব আসে। যুবক হারায় তার প্রিয় প্রেম। তবুও মেহরীনের গান আসে না! মেহরীন কোথায়? কেন চিলেকোঠার আধো অন্ধকারে এখন আর শোনা যায় না মেহরীনের গলা?


আপনার নতুন গানের খবর জানতে চাই…

(হাসি) অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনাকে টিভিতে কম পাই কেনো? এটা কিন্তু ঠিক না। আমি টিভিতে নিয়মিত পারফর্ম করি। আমাদের দেশে বিশটির ওপরে টিভি চ্যানেল আছে। ধরো, বিশ্বে আছে আরো দু’শোটা চ্যানেল। এখন মেহরীন কখন কোথায় গান গায় এটা জানতে হলে ফেসবুকের মেহরীন অফিসিয়াল পেজে যেতে হবে। ধরো আমি আগের দিন পোস্ট দিলাম, ওই পোস্টটা কেউ দেখলো না। এখন দু’শো বিশটা চ্যানেলে কোনটায় মেহরীন গান গাইছে সেটা কীভাবে জানবে? আমি কিন্তু গান করছি। কিন্তু সেটা হয়তো সেভাবে প্রচার হচ্ছে না। স্ক্রিনে কিন্তু আছি। কাজও করছি নিয়মিত।

আর নতুন অ্যালবাম?

বিজ্ঞাপন

আসলে এখন অ্যালবাম প্রকাশে প্রযুক্তিগত কিছু ঝামেলা আছে। তবে বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসছে গান আসছে। আর স্টেজ শোও করছি নিয়মিত। আমি সাধারনত কর্পোরেট শো বেশি করি, সেখানে মেইন অডিয়েন্স কম আসে। আর ফাঁকে ফাঁকে আউটডোর স্টেজ শো ও হচ্ছে।  দেশের বাইরেও শো হচ্ছে। তবে আমি দেশের বাইরে শো করতে তেমন আগ্রহ পাই না।

কোনো বাজে অভিজ্ঞতা?

হ্যাঁ, বাইরে গান করা নিয়ে কিছু ব্যাড এক্সপেরিয়েন্স আছে। এটা হয় কারণ আমাদের মিউজিক ইন্ডান্ট্রিটা যেহেতু গ্রো করেনি সেভাবে। একজন আর্টিস্ট কিন্তু মিডিয়া প্রফেশনের সবকিছু দেখতে পায় না। উই নিড আ স্পোকপার্সন, উই নিড আ প্রপার ম্যানেজমেন্ট। তো ম্যানেজমেন্ট না থাকলে অনেক কমপ্লেইন তৈরি হয়। আমরা জাস্ট বলে আসি, ‘আপনার কাজ করলাম না’। এরকম হতো না যদি আমাদের একটা ম্যানেজমেন্ট টিম থাকতো, সিস্টেম থাকতো। এটার মূল কারণ হচ্ছে স্পন্সরশীপ, বিগ ফিন্যান্স না আসা। বিগ ফিন্যান্স না আসার কারণ আমরা শিল্পীরা হয়তো সেভাবে ডেভলপ করিনি। আমরা কিছু আর্টিস্ট যদি এটাকে স্ট্রংলি দেখতে পারতাম, যে আমরা কাজ করবো না যতক্ষণ না আমাদের ফেসিলিটিজগুলো দেয়া হবে। আমি একা বললে হবে না। বাকিদেরও বলতে হবে। যারা গুরুত্বপূর্ণ আছেন তাদেরকেও বলতে হবে। এভাবে ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করতে হবে। স্যাক্রিফাইস না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করবে না।

বিজ্ঞাপন

এমন ‘স্যাক্রিফাইস’ কি করা সম্ভব?

আমার মনে হয় না। কারণ ইউনিটি নেই। আমি সেভাবে আশা দেখি না।

ইউনিটি না থাকার কী কারণ? 

শিক্ষার অভাব। এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড, ফাইনান্সিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড। তবে ইউনিটির জন্য পয়সা লাগে না। পাঁচ মাসও যদি আমরা স্যাক্রিফাইস করে তাহলে কিন্তু পরের জেনারেশনটা দাঁড়িয়ে যায়। আমি জানি না এমন স্টেটমেন্ট দিলে এটার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। ধরো, নেক্সট ফাইভ মান্থ আমরা রেডিওতে কোন গান দিচ্ছি না, টিভিতে যাচ্ছি না। যতক্ষণ না একটা সিস্টেম দাঁড়াবে, একটা রুলস দাঁড়াবে। যেমন ধরো, রেডিওতে আমরা রয়ালটির জন্য বহু বছর ধরে কথা বলে যাচ্ছি। পাচ্ছি না। ফোন কোম্পানিগুলো আমাদের গান ব্যবহার করে ব্যবসা করছে। কে পায় না পায় এটার কোন খোঁজ নেই। তারপর স্টেজেও আমাদের সম্মানী বিভিন্নভাবে কাট করা হয়। বিভিন্ন মিডিয়া হয়ে যখন আমাদের কাছে আসে তখন টাকার পরিমাণ কমে যায়। এই ব্যাপারগুলো সলভ করা যাবে তখনই, যখন শিল্পীদের মধ্যে শতভাগ ইউনিটি থাকবে। নিরানব্বই হলেও হবে না। এসব কারনেই হয়তো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এতো অস্থিরতা! আমাদের এতো অবনমন!

বিজ্ঞাপন

এই অবনমন কি চলতেই থাকবে? 

না না, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এটা কেউই বলতে পারবে না। তবে এখন কিন্তু বাংলা গান হচ্ছে। রেডিও খুললেই বুঝতে পারবে এখন গান হচ্ছে। বাংলা গানের জোয়ার চলছে বলা যায়। তাই আমি কখনোই বলবো না এখানেই শেষ। সব সময়ই মানুষ ভেবেছে এখানেই বুঝি শেষ! চেইনের লিংক বুঝি আর নেই! কিন্তু দেখা গেছে, শেষের পরেই আবার শুরু হয়েছে। শিল্প বহমান নদীর মতো। কোথাও হয়তো তার চলার পথ সংকীর্ণ হবে তবে সে থামবে না। এগিয়ে যাবে।

তাহলে অবনমন থেকে সংগীতকে বাঁচানোর কী উপায়?

শিল্পীর অহংকারটা একটু অন্যরকম। আমি যেন অহংকারের সুযোগ পাই। (হাসি) সেই জায়গা থেকে ধরো, সব দেশ বলবো না কিছু দেশে একটা পাসপোর্ট আছে। শিল্পী যেখানে যাবে এই পাসপোর্টটা দেখালেই তার বাস ফ্রি, ট্রেন ফ্রি, এয়ারপোর্টের প্যাসেজ ফ্রি, মানে হি অর শি কনসিডার্ড এজ আ ভিআইপি। তখন কারো মেডেল লাগে না, অথোরিটির এমন একটা পাসপোর্ট হলেই চলে। তখন শিল্পী বোধ করে আমি তো একজন শিল্পী। এটা সম্মানের। এমন হলে ‘সুন্দর হিংসা’ তৈরি হয়। তখন ছোটরা বলবে আরে যদি ওরকম হই তাহলে আমি পাসপোর্টটা পাবো। মেধাবী এবং শিক্ষিতরা তখন সংগীতে আসবে। প্লাস, পজিটিভ ক্রিটিসিজম নেই বাংলাদেশে। ক্রিটিসিজম হ্যাজ টু বি দেয়ার, ইয়েলো না, নট ইয়েলো জার্নালিজম। ক্রিটিসিজম না থাকলে আর্ট হ্যাজন্ট গ্রো। শিল্প দাঁড়াবে না। এই ক্রিটিসিজম থাকা উচিত। ব্যক্তি আক্রমণ নয়, বিদ্বেষও নয়।

সারাবাংলা/তুসা/কেবিএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন