বিজ্ঞাপন

পর্যাপ্ত মজুদ, রোজায় দাম বাড়ছে না: দাবি ব্যবসায়ীদের

April 20, 2018 | 1:49 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রোজার বাকি আছে একমাসেরও কম। এরই মধ্যে রোজার পণ্যের দাম বাড়বে কিনা এ নিয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা। বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন এবার রমজানে প্রধান কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়বেনা। রোজার প্রধান পণ্যগুলোর যথেষ্ট মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় প্রধান পাঁচ উপকরণের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহও রয়েছে। দু’মাসের ব্যবধানে ছোলাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য। কয়েকমাস আগে যেখানে ৮৫ টাকা কেজিতে ছোলা বিক্রি হয়েছে, এখন তা মিলছে ৭০ টাকায়। উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে এখন পেঁয়াজের দামও কম। দেশি পেঁয়াজের দাম এখন কেজিপ্রতি ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। ৯৭ থেকে ১০৩ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। প্রকারভেদে মসুর ডালের দাম ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে ১০০ টাকা কেজিতেও ভালো মানের মসুর ডাল মিলছে। আর বেগুনের দাম এখন কেজিতে ৪০ টাকা। কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে ছুটির আমেজে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন নগরবাসী। আর যাদের ঘর সামলাতে হয়, কিংবা খোঁজ নিতে হয় রান্নাঘরের তারা সকাল সকাল ছুটে গিয়েছিলেন বাজারে। কেনাকাটা করেছেন রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। কেউ কেউ এখন থেকেই কিনে রাখছেন পেঁয়াজ। শবে বরাতের জন্যও কেনাকাটা করছেন অনেকে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেটে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসছে। ফলে বাজারে এখন পেয়াজের দাম কম। ৩২ থেকে ৩৩ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ২৩ থেকে ২৪ টাকা। পাইকারি বাজারের বড় বিক্রেতা খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজায় এবার পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পাল্লায় (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে।’

আরেক বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, ‘দেশে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। মানুষ এখন শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য পেঁয়াজ কিনছে। রোজার কেনাকাটা শুরু করেনি। তবে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি, কৃষক এবং আমাদের কারোই লাভ থাকছে না।’

বিজ্ঞাপন

কারওয়ান বাজারে মোহাম্মদুপর থেকে বাজার করতে এসেছিলেন মো. ফজলে রাব্বী। ১০ কেজি পেঁয়াজ কেনার পর সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কম মনে হলেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত কয়েকদিন ১৩০ টাকা পাল্লায় পেঁয়াজ কিনতে পারলেও আজ কিনতে হয়েছে ১৫০ টাকায়।’ জানালেন, রোজার চাহিদা অনুযায়ী তিনি পেঁয়াজ কিনে রাখলেন।

কিচেন মার্কেটের গ্রীণ স্টোরের মালিক ইলিয়াস বেপারী বলেন, ‘৭০ টাকা কেজিতে এখন ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে। ডাবলি মটর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ভালো মানের মশুরের ডাল গড়ে ১০০ টাকা কেজি।’ আর বি-বাড়িয়া স্টোরের এক কর্মচারী জানান, মাস দুয়েক আগে ছোলা ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে যা ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তার মতে, ছোলার দাম আর বাড়বে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই বাজারের সয়াবিন তেলের এক বড় কারবারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘৯৭ থেকে ১০৩ টাকা কেজিতে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। শবে বরাতে হয়তো ১ থেকে ২ টাকা দাম বাড়তে পারে। রোজা আসলে পরে ওই দাম কমিয়েই বলা হবে দাম কমানো হয়েছে।’ এম আর ট্রেডার্সের মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিগত এক মাসেও তেলের বাজারে কোন পরিবর্তন হয়নি। কোন কিছুর দামই কিন্তু বাড়েনি। সরকার ও বড় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সব কিছুরই পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তাই বাজারও স্থিতিশীল।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট ৫২ থেকে ৬১ টাকা, নাজির ৬৪ থেকে ৭২ টাকা ও কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কমেছে সবজির দাম। সিম ৩০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, কাকরুল ১২০ টাকা ও কাঁচা আম ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেছে অন্যান্য সবজিরও।

তবে একদিনের ব্যবধানেই বাজারে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা। একই বাজারের রসুনের পাইকারি বিক্রেতা কামরুল বলেন, ‘গতকাল ৭৪ টাকা কেজিতে চায়না রসুন বিক্রি করলেও আজ তা ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুদিনের ব্যবধানেই ৬ টাকা দাম বেড়েছে। তবে দেশি রসুনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।’ একই ধরণের তথ্য জানিয়ে আরেক বিক্রিতা শফিকুল হাসান বলেন, ‘চায়না রসুন বৃহস্পতিবার ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও শুক্রবার তা ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হবে। তবে দেশি রসুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্য তেল, ১৩ লাখ ৭ হাজার টন চিনি, ১ লাখ ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ৪ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ ও ২ লাখ ৪৭ হাজার টন  ছোলা আমদানি হয়েছে। এ অবস্থায় রমজানে বাজারের উপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে সেজন্য একসাথে সারা মাসের বাজার না করে ভাগে ভাগে কেনার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

সারবাংলা/ইএইচটি/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন