বিজ্ঞাপন

‘বাতাস দিয়ে টাকা নিচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি’

June 20, 2018 | 5:44 pm

।।এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গ্রাহককে গ্যাস সেবার পরিবর্তে বাতাস দিয়ে টাকা নিচ্ছে গ্যাস বিতরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল)। শুধু তাই নয়, আগামী অর্থবছরে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসায়িক পরিধি কয়েকগুণ বাড়াতে চায়। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো মূলধন বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেই পিজিসিএলের।

উল্টো সেবা দেওয়ার আগেই গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চদরে সেবা বিক্রির জন্য এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের বিতরণ চার্জ এবং ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের আবেদনের বিষয়ে বিইআরসি’র গণশুনানি থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিইআরসি’র গণশুনানি বুধবার সকালে (২০ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি অনুষ্ঠানে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুর্শেদ ও মাহমুদ উল হক ভুঁইয়া।

এ সময় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পিজিসিএল, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি অনুষ্ঠানে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিন ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। যার বিপরীতে পিজিসিএল ৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে প্রতিদিন ১৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাবে, এই তথ্যকে ভিত্তি করে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসা বাড়াতে হলে জনবল, কারিগরি সহায়তাসহ অর্থকড়ি প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

পিজিসিএলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ক্রমহ্রাসমান দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন এবং দেশে গ্যাসের উত্তরোত্তর চাহিদা বাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে বিভিন্ন খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে সরকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস আইওসি গ্যাসের ক্রয়মূল্য, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা এবং উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানির ঘাটতি মোকাবিলায় ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার ভারিত গড়ে ৭৫ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ঘনমিটারপ্রতি শূন্য দশমিক ২৬৫৪ টাকা থেকে শূন্য দশমিক ৬৬৫০ টাকায় পুননির্ধারণ করা প্রয়োজন।

শুনানিতে পিজিসিএলের উপস্থাপন করা তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্যাস ক্রয় করেছে ৯৬৮ দশমিক ২৫ এমএমসিএম, অথচ ওই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করেছে ১০৩০ দশমিক ৮০ এমএমসিএম। অর্থাৎ ওই অর্থ বছরে পিজিসিএলের কাছে যে পরিমাণ গ্যাস ছিল, প্রতিষ্ঠানটি ওই পরিমাণ থেকেও বেশি গ্যাস ভোক্তাকে সরবরাহ করেছে। এই অতিরিক্ত গ্যাস পিজিসিএল কোথায় পেল, প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা বুধবারের শুনানিতে এর কোনো জবাব দিতে পারেনি।

একইভাবে পিজিসিএল ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরেও পর্যায়ক্রমে ১০৭৪ দশমিক ৯৬ এবং ৮৪৭ দশমিক ৭৬ এমএমসিএম গ্যাস ক্রয় করলেও, বিপরীতে ১১৩৯ দশমিক শূণ্য ৫ এবং ৯১০ দশমিক ৯৭ এমএমসিএম গ্যাস বিক্রি করেছে।

পিজিসিএলের এই বাতাসে গ্যাস বিক্রির ঘটনায় বিইআরসি’র কারিগরি কমিটি বুধবারের শুনানিতে বলেছে যে, গ্যাসের লো-প্রেসারের কারণে অনেক শিল্প গ্রাহক সারামাসে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পেলেও ন্যূনতম হারে গ্যাস বিল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এতে অনেক বিরোধের উদ্ভব হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, পিজিসিএল যে আবেদন করেছে তা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা। কেননা তারা সেবা না দিয়েই, ভবিষ্যতে সেবা দেবে, তার জন্য এখন থেকেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। পিজিসিএলের প্রস্তাবটি বিইআরসি’র কারিগরি কমিটিও বাস্তব সম্মতভাবে চিন্তা করে মূল্যায়ন করেনি।

তিনি আরো বলেন, পিজিসিএলের সঞ্চালন লাইনের শতভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে না কিন্তু তারা এর জন্য ভোক্তার কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে, এটা অন্যায় এবং সরকার এভাবে শোষণ করতে পারে না।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন