বিজ্ঞাপন

যেভাবে কাটল রিজভীর ঈদ

June 16, 2018 | 8:56 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রুহুল কবির রিজভী। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তিনি। দলটির দফতর সম্পাদক হিসেবে অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্বও পালন করছেন এক সময়ের তুখোড় এই ছাত্রনেতা।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত সাড়ে চার মাস ধরে স্বেচ্ছায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন নয়াপল্টন কার্যালয়ে! খালেদা জিয়ার স্নেহধন্য রিজভীর ঈদটাও কাটছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই।

ঈদের দিন সকাল ৯টা ৫৩ মিনিট। চিরচেনা বিএনপি অফিসের তৃতীয় তলার কনফারেন্স রুম। পাশেই দলের সেক্রেটারি জেনারেলের রুম। রুমের সামনে রাউন্ড টেবিলে রাখা ফুলের চাকি। ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে এটি। কনফারেন্স রুমে বসে আছেন বিএনপির কয়েকজন কর্মী।

বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞেস করলে এদের একজন জানালেন রুহুল কবির রিজভী তার নিজ কামরায়। পাঁচ ফিট চওড়া, আট ফিট লম্বা এ ঘরটিকে ঠিক রুম বা কামরা বলার সুযোগ নেই। বড় জোর একজন লোকের জন্য ছোট্ট একটি বিশ্রাম কক্ষ বলা যেতে পারে। এই কক্ষেই গত সাড়ে চার মাস ধরে বাস করছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

সকাল ১০টা ০২ মিনিটে বিশ্রাম কক্ষ থেকে বেরিয়ে অফিসের দাপ্তরিক রুমে এলেন। পরনে লুঙ্গি, গায়ে একটি ক্যাজুয়াল শার্ট, চুলগুলো অগোছালো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে চিরুনির আঁচড় পড়েনি চুলে। মুখেও খোচা খোচা দাড়ি।

আগে থেকে সেখানে উপস্থিত বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, আকবর সিরাজী এগিয়ে গিয়ে রিজভীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। এরপর একে একে বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন দলের এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ পেলেন অফিস স্টাফরাও। এদের কেউ কেউ পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করলেন। রুহুল কবির রিজভীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র দুয়েকজন নেতাও তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন।

শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক পর্যায়ে সেখানে আসেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার। তিনিও রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন।

ঘর-বাড়ি ছাড়া রুহুল কবির রিজভী হয়তো আগে থেকেই জানতেন ঈদের দিন সকালে নেতাকর্মী সমর্থকরা আসবেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। তাই আগে ভাগেই বগুড়া থেকে দই আনিয়ে রেখেছিলেন। দই দিয়েই সবাইকে আপ্যায়ন করলেন।

বিজ্ঞাপন

কেউ একজন সেমাই খাইতে চাইলে রিজভী বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘এখানে সেমাই রান্না করার সুযোগ নেই বলেই বগুড়া থেকে পিওর দই এনে রেখেছি।’

কথা-বার্তার এক ফাঁকে কেউ একজন বললেন,‘ভাই আজ তো ঈদ। একটা পাঞ্জাবি পরে বসেন।’ জবাবে রিজভী বললেন, ‘আমাদের আবার ঈদ! যেভাবে আছি এভাবেই ভালো।’

সকাল ১১টা নাগাদ দফতর কক্ষেই কাটালেন রিজভী। এরপর বিশ্রাম কক্ষে ফিরে প্রাতঃকৃত্যর জন্য প্রস্তুতি নিলেন তিনি।

ঈদের দিনের প্রথম প্রহর এভাবেই কাটল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের। ঘর-বাড়ি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে পড়ে থাকা রিজভীর ঈদ খুব একটা বর্ণিল হয়ে ওঠেনি। তবে স্বেচ্ছায় অফিসবন্দি রিজভী সহকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষি হিসেবে এমন কয়েকজনকে পেয়েছেন, যারা সব সময় ছায়ার মতো রিজভীর পাশে থাকেন। তার সবরকম প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেন। এরাই মূলত, রিজভীর নিঃসঙ্গ অফিসযাপনের সঙ্গী। এরাই বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনে খাওয়ান রিজভীকে।

ঈদের দিন সকালে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সারাংলাকে তিনি বলেন, ‘জীবনটা এ রকমেরই। বিশেষ করে যারা রাজনীতি করেন, তাদের জন্য বিষয়টি কষ্টের বা বেদনাদায়ক হলেও অস্বাভাবিক নয়। এই যে আমাদের নেত্রী কোনো অপরাধ না করেই কারাগারে রয়েছেন। আজ তিনি নিঃসঙ্গ ঈদ উদযাপন করছেন। উনার থেকে তো আমি ভাল আছি। আমার সঙ্গে অন্তত সবার দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন