বিজ্ঞাপন

সেলিম আল দীনের জন্মদিন আজ

August 18, 2018 | 9:14 am

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ঔপনিবেশিক সাহিত্য ধারার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলা নাটককে আবহমান বাংলার গতিধারায় ফিরিয়ে এনেছিলেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। বাংলা নাটকে বিষয়, আঙ্গিক আর ভাষা নিয়ে গবেষণা ও নাটকে তার প্রতিফলন তুলে ধরার মাধ্যমে রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী নাট্যব্যক্তিত্ব তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা নাটকের যে আন্দোলন, তার পেছনেও রয়েছে সেলিম আল দীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের শেকড়ের সন্ধানে মগ্ন এই নাট্যকারের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

বরেণ্য এই নাট্যব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে নানা আয়োজনে। এই দিনকে ঘিরে দুই দিনের বিশেষ উৎসব পালন করছে নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ ও ‘স্বপ্নদল’।

শুক্রবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে স্মারক বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঢাকা থিয়েটারের অনুষ্ঠান। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় শিমুল ইউসুফের নির্দেশনায় সেলিম আল দীনের লেখা নাটক ‘ধাবমান’। আজ শনিবার সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাও নিবেদন করবে এই নাট্যদলটি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকীতে স্বপ্নদলের দুই দিনের উৎসবও শুরু হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। ‘সেলিম আল দীন সতত অনিবার্য রয়, বাঙলা নাট্যের শিল্পসুধা বিশ্ব করবে জয়’ প্রতিপাদ্যে উৎসবের শুরুতে নাট্যাচার্যের জীবন-কর্ম-দর্শন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে মঞ্চস্থ হয় বাদল সরকারের রচনা অবলম্বনে জাহিদ রিপনের রূপান্তর ও নির্দেশনায় স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। আজ সেলিম আল দীনের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবে এই নাট্যদলটি। এরপর সন্ধ্যায় সেলিম আল দীন রচিত স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘হরগজ’ মঞ্চস্থ হবে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে।

সেলিম আল দীনের জন্ম ১৯৪৯ সালে, ফেনীতে। ফিরোজা খাতুন ও মফিজউদ্দিন আহমেদ দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। ফেনীতে জন্ম হলেও বাবার চাকরির সূত্রে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটক।

পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন সেলিম আল দীন। ওই বিভাগ থেকেই তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো নাটক বিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার স্টাডিজ’। নাট্যচর্চার জন্য ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা ছিল তার। পরে সারাদেশে নাট্যআন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ১৯৮১-৮২ সালে আরেক নাট্যযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।

বিজ্ঞাপন

নাটক রচনার পাশাপাশি নাটক নিয়ে তিনি গবেষণা চালিয়ে গেছেন আজীবন। বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন তিনি নিজেই। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণকেন্দ্রিক এথনিক থিয়েটারেরও উদ্ভাবনকারী তিনিই।

সেলিম আল দীনের লেখা নাটকের মধ্যে ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘চাকা’, ‘হরগজ’, ‘প্রাচ্য’, ‘হাতহদাই’, ‘নিমজ্জন’, ‘ধাবমান’, ‘পুত্র’, ‘বনপাংশুল’ উল্লেখযোগ্য। ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে তার গবেষণাধর্মী নির্দেশনা দুইটি— ‘মহুয়া’ ও ‘দেওয়ানা মদিনা’। তার রচিত ‘চাকা’ ও ‘কীত্তনখোলা’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন সেলিম আল দীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।

সারাবাংলা/এমএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন