বিজ্ঞাপন

রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে শিক্ষার্থীর ব্যাগ ছিনতাই, পুলিশ ‘দর্শক’

September 2, 2018 | 8:57 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে রিকশায় করে দামপাড়া যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানজিদা তাহসিন। নাসিরাবাদে সানম্যার শপিংমলের সামনে পেছন থেকে আসা একটি অটোরিকশা থেকে ছিনতাইকারী সানজিদার ব্যাগ টান দেয়। এতে চলন্ত রিকশা থেকে নিচে পড়ে যান সানজিদা। সেই অবস্থায় ছিনতাইকারীরা ব্যাগসহ তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ গজ। একপর্যায়ে ব্যাগের হাতল ছিঁড়ে যায়। ব্যাগটি নিয়ে দ্রুত চম্পট দেয় ছিনতাইকারীদের অটোরিকশাটি।

গুরুতর আহত সানজিদার অভিযোগ, শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন সার্জেন্টসহ দুই পুলিশ সদস্যের সামনে। তারা ছিনতাই প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখেননি। বরং ঘটনার পর তারা বলেছেন, ছিনতাই প্রতিরোধ করা ট্রাফিক পুলিশের কাজ নয়।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করতে গিয়েও ব্যর্থ হন সানজিদা। থানার ডেস্কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সাফ জানিয়ে দেন, বড় স্যার (ওসি) থানায় না থাকায় তারা মামলা নিতে পারেবন না। এদিকে, আহত সানজিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তিনি থানা থেকে চিকিৎসকের কাছে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

সানজিদা তাহসিনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। তিনি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামে বেড়াতে আসা সানজিদা শনিবার গোপালগঞ্জে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে দামপাড়ায় যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন।

সানজিদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহদ্দারহাটে আত্মীয়ের বাসা থেকে বের হয়ে আমি ও আমার মামা (আতাহার মাসুম) রিকশায় করে দামপাড়ার দিকে যাচ্ছিলাম। সানম্যারের সামনে যেখানে ফ্লাইওভারের সংযোগ অংশ শেষ হয়েছে, সেখানে রিকশা পৌঁছার পর পেছনের একটি অটোরিকশা থেকে ব্যাগ টান দেওয়া হয়। ব্যাগে আমার কিছু ‍গুরুত্বপূর্ণ বই ও সাড়ে ৯ হাজার টাকা ছিল। সেজন্য আমি ব্যাগটি জোরে চেপে ধরেছিলাম। আকস্মিক টানে আমি চলন্ত রিকশা থেকে নিচে পড়ে যাই। তখনও ব্যাগের হাতল ধরে রেখে আমি সেটি রক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

‘আমাকে টেনেহিঁচড়ে ব্যাগটি নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। আমি মাথায়-হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছি। ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার পর সেখানে লোকজন জমে যায়। সেখানে দাঁড়ানো ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট ও একজন কনস্টেবল। তাদের একজনের মোটর সাইকেল ছিল। ধাওয়া দিয়ে অটোরিকশাটি আটক করা কিংবা ঘটনার সময় ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে ধরে ফেলা সহজ ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করলেন না,’— বলেন তিনি।

সানজিদা আরও বলেন, ‘আমি ও আমার মামা এবং স্থানীয় লোকজন ট্রাফিক সদস্যদের কাছে গিয়ে বলি, আপনাদের সামনে ছিনতাই হয়ে গেল, আপনারা তো কিছুই করলেন না। তারা বলেন, আমরা ট্রাফিক, ছিনতাই ঠেকানো আমাদের কাজ নয়। সেখান থেকে আমরা জিইসি মোড়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে বিষয়টি খুলে বলি। তারা বলেন, এটি পাঁচলাইশ থানার বিষয়, সেখানে গিয়ে অভিযোগ করুন।’

পরে মামাকে নিয়ে সানজিদা পাঁচলাইশ থানায় গেলে সেখানেও মামলা দায়ের করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তারা। সানজিদা বলেন, ‘থানার ডেস্কে দুই পুলিশ সদস্য বসেছিলেন। তারা প্রথমে মামলা করতে বললেন। আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এসময় তারা আবারও বললেন, বড় স্যার নেই, এখন মামলা নেওয়া যাবে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা চলে আসি।’

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহি উদ্দিন মাহমুদকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালি উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোট হোক কিংবা বড় হোক— যেকোনো ঘটনা জানতে পারলেই আমরা রেসপন্স করি। এই ঘটনাটা আমরা জানতামই না। এখন যেহেতু জেনেছি, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সাংবাদিকদের কাছে ঘটনাটি জানতে পেরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ খুবই দুঃখজনক। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করা যায় না। আমি তদন্ত করে দেখছি। যারাই এই ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন