বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকালীন সরকারে বাইরের কেউ থাকবে না: কাদের

September 11, 2018 | 11:57 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নির্বাচনকালীন সরকারে বাইরের বা টেকনোক্রেট কেউ আসবে না। অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেতু ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারে বাইরের কেউ আসবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। আকারটা ছোট হবে। গতবারের মতো হবে। তবে জাতীয় পার্টি তাদের আরো দুএকজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, তিনি কতটা বিবেচনা করবেন। তবে যেখানে সরকারের পরিধি কমানো হচ্ছে, সেখানে বাড়ানো হবে কিনা সেটা তার এখতিয়ার। এগুলো আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে আছে। নির্বাচনকালীন সরকার অক্টোবরের মাঝামাঝি হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

আগামী নির্বাচন পূর্বের মতো জাতীয় পার্টিকে নিয়েই হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বলেছে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তারা তিনশ আসনে নির্বাচন করবে। বিএনপি আসলে আসন বণ্টন, সমঝোতা ইত্যাদি তখন হবে। সবই নির্ভর করছে মেরুকরণ কীভাবে হচ্ছে।’

কাদের বলেন, ‘জোট শরীকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।’

দলের নমিনেশন কবে ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অক্টোবরে শিডিউল হবে। অক্টোবরেই আমাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি কয়েকজন নেতাকে অন্তর্কোন্দলের কারণে শোকজ করা হয়েছে। এর মানে কি দলের ভেতর অন্তর্কোন্দল রয়েছে। এই কোন্দল মেটানো যাচ্ছে না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে গিয়েছি। অনেকেই আমার সঙ্গে গিয়েছেন। ১৮টি বড়-মাঝারি সমাবেশ হয়েছে। লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হয়েছে। বিএনপি পল্টনে যা করতে পারেনি, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি লোক হয়েছে। এসব সমাবেশে আপনারা অন্তর্কোন্দলের কী দেখেছেন? এত বড় দল, ক্ষমতাসীন পার্টি। স্বার্থান্বেষীরাও এখানে ভিড় করে। আমি কেবল উদাহরণের জন্য এটা বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক সুশৃঙ্খল। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের জন্য অনেকেরই আশা-আকাঙ্ক্ষা আছে। তাই বলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করতে হবে, এ ব্যাপারে আমাদের নিষেধ আছে। কড়াকড়ি আছে। সম্প্রতিক অন্তর্কলহের কিছু ঘটনা ঘটেছে। দিনাজপুর, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরশেন নির্বাচনে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে এমপিকে অবাঞ্চিত করেছে। আমাদের অবজারভেশনে এসব চোখে পড়েছে। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে এসব এসেছে। সে কারণেই ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

কাদের বলেন, ‘এখানে যারা অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে তাদের কড়া ভাষায় শোকজ করা হয়েছে। আবার যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদেরও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে দলীয় নেতা কর্মীদের এত অভিযোগ কেন। বরিশালে এমপি পেয়েছেন। সিলেটের মেয়র প্রার্থীও চিঠি পেয়েছেন। সিলেটের মেয়র প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে সিটি নির্বাচনের প্রার্থীর পক্ষে ৭টিতে কোনো কাউন্সিলর ছিল না সব চিন্তা করেই আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। দলের সভাপতির নির্দেশেই আমি উত্তর জনপদ সফর শেষে করে ফিরেই এই চিঠি দিয়েছি। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মনোনয়ন বোর্ড আছে, কিন্তু কোন কোন মন্ত্রী কোন কোন এলাকায় গিয়ে প্রাথমিকভাবে অমুক মনোনয়ন তালিকায় আছেন বলছেন। এটা আপনাদের দলীয় সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘এই ধরনের কোন অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি। তবে যাদের অবস্থা ভাল, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, যারা এগিয়ে আছে, এ রকম অনেককে কাজ করতে বলা হয়েছে। তাদের কিছু কিছু টিপস দেয়া হয়েছে যে, আপনি এসব বিষয়ের ওপর নজর দিন। এই এই ঘাটতি আছে। এই ঘাটতিগুলো পূরণ করুন এবং আরও গণমুখী হোন। উঠোন বৈঠকসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিন। তার মানে এমন ধারণা দেওয়া হচ্ছে, আপনি আরো ভালভাবে কাজ করলে, ঘাটতিগুলো পূরণ করলে মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব হবে। এই ধরনের আভাস ইঙ্গিত হয়ত আমাদের লিডার শেখ হাসিনা দিয়েছেন। কিন্তু কাউকে মনোনয়ন দেওয়া একেবারেই শিওর এ রকম দেওয়া হয় নাই।’

বিজ্ঞাপন

কাদের বলেন, ‘নবীন যারা তারা যদি জনপ্রিয়তাই এগিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু গতবার আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, এরমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, যারা জনগণের কাছে তাদের বা তাদের আশপাশের লোকের জন্য অসুবিধায় পড়েছেন, তাদের মধ্যে নবীন কম। কে কতটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সেটাই তার নমিনেশন পাওয়ার পূর্বশর্ত।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রশ্নটা সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল না। প্রশ্নটা হচ্ছে বিশেষায়িত। বেগম জিয়ার চিকিৎসা উন্নতমানের হচ্ছে কি না। বিশেষায়িত হচ্ছে কিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল বিশেষায়িত হাসপাতাল। তার দরকার চিকিৎসা। কোন হাসপাতাল সেটা তো বিষয় না। উন্নত চিকিৎসার জন্য যে হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব, সেখানে যেতে আপত্তি কোথায়। আসলে আপত্তিটা হচ্ছে, বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চাইতেও তার অসুস্থতাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। ইস্যু বানাতে চাইছে। এখানে পলিটিক্স হচ্ছে। এটাকে ইস্যু বানিয়ে তারা আন্দোলন করতে চাইছে। খালেদা জিয়া গ্রেফতারের সময় তারা আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, পারেনি। এই কারণে তার স্বাস্থ্যগত বিষয়টাকে নিয়ে তারা রাজনীতি করছেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষকে সংগঠিত করতে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চাইছে। তাদের নিজেদের ঘরেই তো ঐক্য নেই। বিভিন্ন ইস্যুতে তারা নিজেরাই দ্বিধাবিভক্ত। তারা নিজেরাই তাদের অফিসে এতে অন্যকে সরকারের এজেন্ট বলে। তাদের নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস আছে। তাদের মধ্যে সন্দেহ প্রবল। যারা নিজেরা ঘরেই ঐক্যবদ্ধ না, তারা দেশে ঐক্য করবে কীভাবে। আর ঐক্য কাকে নিয়ে করবে? সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ে? সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন তাদের সঙ্গে থাকবে, তখন আওয়ামী লীগসহ আরও অনেক দল তাদের সঙ্গে যাবে না। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। এই দলকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য কেমনে হবে? তাদের এই ঐক্যকে জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক ঐক্য বলা যেতে পারে। এই নামে সবচেয়ে মানান সই হবে। এটা বলাই ভালো হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আষাড়ে তর্জন গর্জনই সার। দশ বছরে হয় নাই, দুই মাসেই কেমনে হবে। পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়।’

উত্তরবঙ্গ সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন। এটা কোটা আন্দোলনেও লক্ষ্য করেছি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও দেখেছি। মিডিয়ার একটা অংশ বিএনপির আন্দোলন মাঠে না থাকলেও তারা এই আন্দোলনটা করছে। অথবা আন্দোলনের উস্কানি দিচ্ছে। আমি এ প্রসঙ্গে আপনাদের বলতে চাই যুক্তিতে আসুন। ট্রেনে করে উত্তরাঞ্চল গিয়েছি। অনেকেই যাত্রীদের ইন্টারভিউ করেছে। যাত্রীরা বলেছে ঈদের পর থেকে এই ট্রেনটি ৪/৫ ঘণ্টা দেরি হয়ে আসছে। রেগুলার দেরি হচ্ছে। যাত্রী ছিল ৬৫০ জন। আমরা গেছি ৭০ জন। পথে পথে অনেক যাত্রী নেমে গেছেন। আমরা যখনই রেল স্টেশনে নেমেছি, বক্তব্য দিতে নেমেছি, তখন যাত্রীদের অনেকে নেমে সমাবেশে শামিল হয়েছে। এই যে দুর্ভোগ বলা হয়েছে, কয়জন লোক দুর্ভোগে পড়েছে। তারপরেও আমি অনেককে সরি বলেছি। অনেকেই আমাকে বলেছে, আমরা ঈদের মতো উৎসব করে ফিরছি।’

সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিন্তু এখন ছুটির দিন ছাড়া বড় সমাবেশ করি না। বিএনপি একটা সভাও ছুটির দিনে করেনি। পল্টনে বিএনপি যে সমাবেশ করেছে, তিনটা রাস্তা বন্ধ করে। কত লক্ষ লোকে সাফার করতে হয়েছে। আমি মিডিয়ার বন্ধুদের বলি, আমি মিডিয়ার শত্রু নই। এখানে দুর্ভোগ আপনারা কিন্তু বলেননি। যাত্রী হলো ৬৫০ জন সেখানে দুর্ভোগ। আর রাস্তা বন্ধ করে বিএনপির যে সমাবেশ সেখানে কি দুর্ভোগ হয়নি? বিএনপি নিয়ম মানে না। তারা ডেকেছে মানববন্ধন। এটা কি মানববন্ধন ছিল প্রেস ক্লাবের সামনে? রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করেছে, এটা কেন বলেন না। এটা দায়িত্বশীলতা নয়।’

সারাবাংলা/এইচএ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন