বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যানে এগিয়ে জিম্বাবুয়ে, ছাড় দেবে না বাংলাদেশ

November 1, 2018 | 8:29 pm

।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সবকটি ম্যাচই জিতেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার সফরকারীদের বিপক্ষে টাইগাররা খেলবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সিলেটে আগামী ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হবে প্রথম ম্যাচ। ওয়ানডের দুর্দান্ত পারফর্ম সাদা পোশাকেও ধরে রাখতে চাইবে টাইগাররা। দুই দলের টেস্টের পরিসংখ্যানে এগিয়ে জিম্বাবুয়ে। তবে, সাম্প্রতিক পারফর্মে এগিয়ে বাংলাদেশ। নিজেদের মাটিতে কোনোভাবেই ছাড় দেবে না সফরকারী জিম্বাবুয়েকে। দারুণ ফর্মে রয়েছেন মুশফিক, ইমরুল, মিঠুন, মিরাজ, মুমিনুলরা।

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সবশেষ প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ৯ নম্বরে আর জিম্বাবুয়ে রয়েছে ১০ নম্বরে। টাইগারদের রেটিং ৬৭ আর জিম্বাবুয়ের ২। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে খেলেছে ১৪টি টেস্ট ম্যাচ। যেখানে জয়ের পাল্লায় এগিয়ে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছে ৬টি ম্যাচ। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি ম্যাচ। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র হয়।

দুই দল মোট সাতটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। ২০০১ সালে প্রথম সিরিজ খেলেছিল দুই দল। প্রথম চারটি সিরিজই হয়েছিল দুই ম্যাচ সিরিজের। পরের সিরিজে একটিই ম্যাচ ছিল। এরপর আবারো দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। আর সবশেষ সিরিজটি ছিল তিন ম্যাচের। প্রথম তিনটি সিরিজই জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। দুই দলের মুখোমুখি দেখার চতুর্থ সিরিজটি জিতেছিল বাংলাদেশ (২০০৫ সালে)। ২০১১ সালে এরপর আবারো সিরিজ জেতে জিম্বাবুয়ে। ২০১৩ সালের সিরিজটি ড্র হয়। আর সবশেষ ২০১৪ সালের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দেয় টাইগাররা।

বিজ্ঞাপন

২০০১ সালের প্রথম সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে ২-০ (২ ম্যাচ সিরিজ), ২০০১ সালের ফিরতি সিরিজে সফরকারী জিম্বাবুয়ে ১-০ (২ ম্যাচ সিরিজ), ২০০৪ সালের সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০ (২ ম্যাচ সিরিজ) ব্যবধানে জিতেছিল। ২০০৫ সালে নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশ ১-০ (২ ম্যাচ সিরিজ) ব্যবধানে জিতেছিল। ২০১১ সালের সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে ১-০ (১ ম্যাচ সিরিজ) জিতলেও ২০১৩ সালে দুই দল জিম্বাবুয়ের মাটিতে ১-১ (২ ম্যাচ সিরিজ) এ ড্র করে। ২০১৪ সালে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে আধিপত্য ছিল টাইগারদের। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ (৩-০)। সেবার মিরপুরে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে জিতেছিল ৩ উইকেটের ব্যবধানে। খুলনায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা জিম্বাবুয়েকে ১৬২ রানের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে। চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশ সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে উড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছিল ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল, সেই ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে বুলাওয়াতে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ৩২ রানে হারিয়েছিল। ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিকরা জিতেছিল ৮ উইকেটের ব্যবধানে। একই বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে আসে জিম্বাবুয়ে। ঢাকায় দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ড্র হয়, দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ে জেতে ৮ উইকেটের ব্যবধানে। ২০০৪ সালে হারারেতে বাংলাদেশকে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। সিরিজের পরের ম্যাচটি বুলাওয়াতে ড্র করে বাংলাদেশ। পরের বছর ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে স্বাগতিক বাংলাদেশ সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়। একই সিরিজের শেষ ম্যাচটি হয় ঢাকায়, সেটি ড্র করে দুই দল।

এরপর ২০১১ সালের আগস্টে একমাত্র টেস্ট সিরিজের ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ১৩০ রানের বিশাল ব্যবধানে। ২০১৩ সালেও হারারেতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হয়েছিল। এপ্রিলে হওয়া সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফরকারী বাংলাদেশ ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়ে গিয়েছিল। পরের ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে ১৪৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। ২০১৪ সালের অক্টোবরে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছিল জিম্বাবুয়ে। মিরপুরে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে জয়ের পর (৩ উইকেটে) সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচেও জয় পায় (১৬২ রান এবং ১৮৬ রানের ব্যবধানে)।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যানে জিম্বাবুয়ে এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের বিস্তর পার্থক্য। জিম্বাবুয়ে ২০১১ সালে সবশেষ সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর পাকিস্তান, পর পর দুবার নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছিল জিম্বাবুয়ে। ২০১৪ সালে টাইগারদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর জিম্বাবুয়ে আবারো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পর পর দুবার হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে নিজেদের মাটিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৭ রানে হারে জিম্বাবুয়ে। পরের ম্যাচটি অবশ্য ড্র করেছিল তারা। আর সবশেষ তাদের খেলা ম্যাচটিও ২০১৭ সালে, ডিসেম্বরে। সেই ম্যাচে পোর্ট এলিজাবেথে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ৯ উইকেটে ৩০৯ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল প্রোটিয়ারা। জবাবে, প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১২১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জেতে ইনিংস ও ১২০ রানের বিশাল ব্যবধানে।

এদিকে, বাংলাদেশ ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হারে ২০১৫ সালে। একই বছর ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করে টাইগাররা। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ ড্র করে সাকিব-মুশফিকরা। এরপর নিউজিল্যান্ড আর ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার মতো টেস্টের পরাশক্তিদের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দুটিতেই ড্র করেছিল বাংলাদেশ। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে না পারা বাংলাদেশ সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হেরেছে।

কিন্তু তার আগে গলেতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৫৯ রানে হারলেও সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪ উইকেটের ব্যবধানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২০ রানে জিতেছিল টাইগাররা। পরের ম্যাচে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারায় অজিরা। গত বছরের অক্টোবরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রান এবং ২৫৪ রানের বড় দুটি জয় পায়। এরপর চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ড্র করে বাংলাদেশ আর মিরপুরে লঙ্কানদের বিপক্ষে ২১৫ রানে হারে স্বাগতিকরা।

দুই দলের কিছু টুকিটাকি:
দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস
বাংলাদেশ: ৫০৩/১০ (২০১৪); জিম্বাবুয়ে: ৫৪২/৭ (২০০১)
দলীয় সর্বনিম্ন ইনিংস
বাংলাদেশ: ১০৭/১০ (২০০১); জিম্বাবুয়ে: ১১৪/১০ (২০১৪)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান
বাংলাদেশ: হাবিবুল বাশার সুমন (৫৭৮ রান); জিম্বাবুয়ে: ব্রেন্ডন টেইলর (৭৯৩ রান)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস
বাংলাদেশ: সাকিব আল হাসান, ১৩৭ রান; জিম্বাবুয়ে: ব্রেন্ডন টেইলর, ১৭১ রান
সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল (২টি); জিম্বাবুয়ে: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রেন্ডন টেইলর (৩টি করে)
সর্বোচ্চ রানের জুটি
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস (২২৪ রান); জিম্বাবুয়ে: সিকান্দার রাজা-হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (১৬০ রান)
সর্বোচ্চ উইকেট
বাংলাদেশ: সাকিব আল হাসান (২৬টি); জিম্বাবুয়ে: হিথ স্ট্রিক (২০টি)
সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট
বাংলাদেশ: সাকিব আল হাসান ও এনামুল হক জুনিয়র (১৮টি); জিম্বাবুয়ে: তিনাশি পানিয়াঙ্গারা (১৪টি)
ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট
বাংলাদেশ: সাকিব আল হাসান ও এনামুল হক জুনিয়র (৩ বার করে); জিম্বাবুয়ে: ট্রেভিস ফ্রেন্ড (১ বার)

বিজ্ঞাপন

ইনজুরির কারণে এই সিরিজে নেই নেই নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং ওপেনার তামিম ইকবাল। সাকিবের জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নতুন মুখ আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, খালেদ আহমেদ এবং মোহাম্মদ মিঠুন। প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন তারা। দলে ফিরেছেন পেসার শফিউল ইসলাম।

টেস্টের ১৫ সদস্যের দল: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহি, শফিউল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, খালেদ আহমেদ এবং নাজমুল ইসলাম অপু।

সারাবাংলা/এমআরপি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন