বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ‘প্রভাবে’ কক্সবাজারে বাড়ি ভাড়ায় নৈরাজ্য

November 15, 2018 | 9:46 am

।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার: শহরের বাহারছড়া এলাকায় পরী জামান ম্যানশনের নিচতলার দুই রুমের একটি বাসা ৭ হাজার টাকায় ভাড়া নেন ফাউজিয়া আফরিন নামে এক গৃহিনী। গত এপ্রিল মাসে নেওয়া এই ভাড়া বাসার দাম আগে ৫ হাজার টাকা থাকলেও তাকে ভাড়া দেওয়া হয় ৭ হাজার টাকায়। বাসা ভাড়া সঙ্গে  আলাদা করে দিতে হয় বিদ্যুৎ বিল। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই এক লাফে ১ হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ৮ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে এখন ওই ৫ হাজার টাকা দামের ভাড়া বাসার দাম দিতে হয় ৯ হাজার টাকা।

একইভাবে শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে আরেক ভাড়াটিয়া জানান, গাড়ির মাঠের দুই নাম্বার গলির দুই রুমের ৩ হাজার টাকা দামের এক বাসায় তিনি গত ৪ বছর ধরে পরিবার নিয়ে থাকছেন। কিন্তু গত ৫ মাস আগে হঠাৎ ওই বাসার ভাড়া আরও ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭ হাজার টাকা। দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলাম বাড়িওয়ালার কাছে জানতে চায় এনমটি কেন হচ্ছে। তখন বাড়িওয়ালা জানান, সব জায়গায় ভাড়া বাসার দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী আমারও ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।

এই ধরনের অভিযোগ শত শত ভাড়াটিয়ার। এমনও অভিযোগ আছে নানা অজুহাত দেখিয়ে পুরাতন ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বেশি টাকা দিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া নিচ্ছে। শুধু শহরে নয় উখিয়া-টেকনাফের চিত্র আরও ভয়াবহ। ওই এলাকায় যে বাসা ৫০০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হতো, সেই বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানে কাজ করছে দেশি-বিদেশি এনজিওসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন। একদিকে রোহিঙ্গা অন্যদিকে তাদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকার্তা-কর্মচারীদের আবাসনের কারণে শহরে বেড়েছে ভাড়া বাসার চাপ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে বাড়ির মালিকেরা। তারা ইচ্ছেমত বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, যতই ভাড়া বাড়ানো হোক না কেন, কোনো বাসা খালি থাকছে না। রীতিমত অগ্রিম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ থাকছে না সাধারণ ভাড়াটিয়াদের।

এই অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো আইন প্রয়োগ না থাকায় হতাশ ভাড়াটিয়ারা। তারা বলছেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আইন প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, অনেক অসাধু বাড়িওয়ালা লোভে পড়ে পুরাতন ভাড়াটিয়াদের পর্যন্ত বের করে দিচ্ছেন। এমনও দেখা যায় ৫ হাজার টাকা দামের বাসা ভাড়া দিচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। অগ্রিম নিচ্ছে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে কক্সবাজারের অর্থনীতিতে পর্যন্ত মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আনা দরকার। আর এই অসাধু বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিকসহ দেশি-বিদেশী শতাধিক সংস্থা কাজ করছে। আর এসব সংস্থার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক লোকজন। যাদের বেশিরভাগই অবস্থান করছে শহরে। এ কারণে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বাড়িওয়ালার তোয়াক্কা করছে না।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, কক্সবাজার শহরে বাড়িভাড়া বাড়ার বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এ আইন প্রয়োগে শহরের আশপাশে বাড়ির মালিকদের সাথে মিটিং করার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন