বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে বাস করা সেই কুন্তার পেলেন কানাডার আশ্রয়

November 27, 2018 | 9:55 am

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

সাত মাসেরও বেশি সময় তিনি বাস করতেন মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে। সেখান থেকে তার স্থান হয় পুলিশের হেফাজত। কিন্তু মেলেনি মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে শরনার্থী হিসেবে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ।

নানা বাঁধা পেরিয়ে অবশেষে একটি দেশে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় পেলেন সিরিয় নাগরিক হাসান আল কুন্তার। কানাডা তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে।

কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে নিজের রোজকার দুর্দশার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা শুরুর পর বিশ্বের মানুষ তার সম্পর্কে জানতে শুরু হয়, তার পাশে দাঁড়ায়।

বিজ্ঞাপন

সাত মাস বিমানবন্দরে এবং দুই মাস পুলিশ হেফাজতে থাকার পর এখন তিনি স্থায়ী হতে যাচ্ছেন কানাডায়।

স্থানীয় সময় সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে পৌঁছেন তিনি।

আরও পড়ুন: সাত মাস ধরে আশ্রয় বিমানবন্দরে, অতঃপর পুলিশের হেফাজতে

বিজ্ঞাপন

বিবিসি জানিয়েছে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন এবং কানাডা কেয়ারিং সোসাইটি হাসান আল কুন্তারকে শরনার্থী হিসেবে কানাডায় নেওয়ার জন্য কাজ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ হাসান আল কুন্তারকে কানাডায় নেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করেছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাদুটি।

সিরিয়ার নাগরিক হাসান আল কুন্তার কাজ করতেন আরব আমিরাতের একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীর মতো তার জীবনেও নেমে আসে অনিশ্চয়তা। সিরিয়ায় বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে অনিচ্ছা ছিলো কুন্তারের। কারণ তিনি যুদ্ধ ঘৃণা করতেন। এ কারণে কুন্তারের পাসপোর্ট ও নবায়ন করা যায়নি। কুন্তার নিজেও চাননি দেশে ফিরে যেতে। তার ভয় ছিলো সিরিয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হবে অথবা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে জোর করা হবে। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে কুন্তার আরব আমিরাতে থাকছিলেন।

আরব আমিরাত পুলিশ ২০১৬ সালে কুন্তারকে গ্রেফতার করে। এরপর কোনভাবে তার গন্তব্য হয় মালয়েশিয়ায়। কারণ শর্তসাপেক্ষে মালয়েশিয়াতে সিরীয়ার নাগরিকদের ভিসা ব্যতীত ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। তবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নয়। কুন্তারকে মালয়েশিয়ায় তিন মাসের পর্যটন ভিসা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর থেকে কুন্তারের জীবন হয়ে যায় সিনেমার কাহিনীর মতো। মালয়েশিয়ায় ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর কুন্তার বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হন। তুরস্কে তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি। কম্বোডিয়া থেকেও তাকে ফেরতে পাঠানো হয়। কুন্তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেয়ে ইকুয়েডর যেতেও ব্যর্থ হোন। সুতরাং বাধ্য হয়ে কুন্তার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের অভ্যর্থনা এলাকায় থাকতেন। এয়ারলাইনসের কর্মীদের দেওয়া খাবার খেতেন।

এসময়ের মধ্যে বাহিরের পৃথিবীর সাথে কুন্তারের যোগাযোগ রাখার একমাত্র উপায় ছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তিনি টুইটারে প্রতিদিনের ছবি পোস্ট করতেন। মাসের পর মাস কুন্তারের এই ক্লান্তির জীবন দেখে অনেকেই তাকে সাহায্য করতে চেয়েছে। কানাডায় তাকে থাকতে দিতে কয়েক হাজার  স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে লাভ হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২ অক্টোবর মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, বিমানবন্দর থেকে তাকে সরিয়ে পুলিশের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। কুন্তারকে জিঙ্গাসাবাদ শেষে অভিবাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তাকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছিলো।

তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বৈধভাবে শরনার্থী পরিচয়ে কানাডায় বাস করার সুযোগ পেলেন কুন্তার। দীর্ঘ নয় মাসের অনিশ্চিত যাত্রা শেষে এবার হয়ত কিছুটা স্বস্তির জীবনের দেখা পেতে যাচ্ছেন তিনি।

সারাবাংলা/এসএমএন

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন