বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের ‘কান্না’

December 12, 2018 | 12:44 pm

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)  ।।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান মারা গেছেন। মারা গেছেন বার্ধক্যজনিত রোগে। পিতার মৃত্যুতে আর দশজন সন্তানের মতই শোকে মূহ্যমান সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। টুঙ্গিপাড়ায় নিজ ভিটায় দাফনের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়েছে শেখ লুৎফর রহমানের। লাশ কবরে নামিয়ে উঠে এসেছেন সবাই। কবরে মাটি দিতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি। কিছুতেই উঠিয়ে আনা যাচ্ছে না খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে। গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে আর চিৎকার করে বলছে, ‘বঙ্গবন্ধু আপনি আমাকেও কবর দিয়ে দিন। এই শোক আমার সইবে না। সবাই যখন ব্যর্থ তখন পিতার শোক ভুলে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধু। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে কবর থেকে উঠে এলো খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। দাফন শেষ হলো ঠিক ঠাক মতই।

টিভির খবরে ইদানিং সবকিছু ছাপিয়ে নমিনেশনের খবর। নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত বারেক সাহেব। তিনিও একটি ফর্ম কিনেছেন। সারা দিন শরীরের উপর দিয়ে ধকল কম যায়নি। এলাকা থেকে বাস ভরে লোক আনা হয়েছিল অনেক। এখন ঝামেলাও অনেক বেশি। আগেতো বলার আগেই লোকাল বাসে দলে দলে গাদাগাদি করে লোকজন ঢাকায় চলে আসতো। এখন এসি বাস লাগে। সাথে ভালো খাবার, থাকার ব্যবস্থা আর পকেট মানিও লাগে। যা যা দরকার সবই করেছেন বারেক সাহেব। লোকজনও এসেছে বেশ কিছু। তারপরও মনটা খচখচ করছে বারেক সাহেবের। মিডেলম্যানগুলো টাকা-পয়সা ভালোই সরিয়েছে। জিজ্ঞেস করতে অবশ্য যুক্তি দিচ্ছে সরকারী ঝক্কি-ঝামেলার ভয়ে নাকি লোক কম হয়েছে, তবে যুক্তিটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বারেক সাহেবের কাছে। যাই হোক একটু আগেই বিদায় হয়েছে এলাকার লোকগুলো। বিদায় হয়েছে পার্টি অফিসের পান্ডারাও। কিছু উঠতি নেতা এসেছিল। খাইয়ে-দাইয়ে, পকেট ভারি করে তাদেরও বিদায় করেছেন বারেক সাহেব। এখন লন্ডনে চিড়া ভিজলে হয়। এক নমিনেশনের জন্য দেশে-বিদেশে ঘামতো আর কম ঝড়ানো হলো না!

শরীরটা সোফায় এলিয়ে সবে মাত্র বেনসনটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে টিভিটা অন করেছেন বারেক সাহেব। খবরের খোঁজে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে লাফিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথাও যদি কিছু পাওয়া যায়। যদি দেখা যায় তার মিছিলটাও। হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকাতে বঙ্গবন্ধুর পিতার মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো মনে পড়লো তার। মনে পড়ছে তারও বেশ কিছুদিন পরের আরেকটা ঘটনাও। ক্ষমতায় তখন জেনারেল এরশাদ। বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন রাষ্ট্রপতির মা। রংপুরে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। বিষন্ন রাষ্ট্রপতি। লে হালুয়া- এর মাঝে কি এক উটকো ঝামেলা। গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন কাজী জাফর আহমেদ। কিছুতেই দাফনের জন্য লাশ নিয়ে যেতে দিচ্ছেন না। এ জীবন তিনি নাকি আর রাখতে চান না। এ শোক তার সইবে না! সবাই যখন ব্যর্থ তখন এগিয়ে এলেন জেনারেল এরশাদ। অবশেষে তার অনুরোধে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যেতে দিলেন।

বিজ্ঞাপন

‘আচ্ছা, বঙ্গবন্ধু যদি খন্দকার মোস্তাকের অনুরোধটা রাখতেন, কিংবা জেনারেল এরশাদ যদি শুনতেন কাজী জাফরের কথা’! ভাবেন বারেক সাহেব। ‘বাংলাদেশের ইতিহাসইতো অন্য রকম হয়ে যেত’। কিন্তু তাহলে তার নিজের কি হতো ভাবেন বারেক সাহেব। রাজনীতিতে হয়তো আর আসা হতো না। হয়তো ব্যবসায়ী পরিচয়েই জীবনটা পার হয়ে যেত। ‘মন্দ হতো কি?’ মনে হয় না। দেশ যদি ঠিক-ঠাক মতো চলতো, দেশে যদি দুর্নীতি না থাকতো আর নীতিহীনতাই যদি না হতো নীতি, তাহলেতো আর ব্যবসা করার জন্য রাজনীতিবীদ হতে হতো না। ‘কই বঙ্গবন্ধুর সময়তো ইস্পাহানী, জহুরুল ইসলাম কিংবা পুরাতন ঢাকার প্রভাবশালী সর্দাররা- এরা কেউইতো রাজনীতিতে নামেননি’। আর যাই হোক আর নাই হোক, নির্বাচনে নমিনেশনের জন্যতো অন্তত এলাকার লোকজনের দিকে না তাকিয়ে লন্ডনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা লাগতো না।

আসলে টিভিতে খবর দেখতে দেখতে বারেক সাহবের চোখটা আটকেছে নিজের মহাসচিবের সাংবাদিক সম্মেলনে। দলীয় নেত্রীর হয়ে নমিনেশন ফর্ম কেনার কথা সাংবাদিকদের জানাতে গিয়ে কান্নায় গলা জড়িয়ে আসছে ভদ্রলোকের। কোনমতে টিস্যুতে চোখ মুছে-টুছে কথা শুরু করলেন তিনি। নেত্রীর বিহনে রাজনীতি-টাজনীতি সব বোধ করি তার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।

বারেক সাহেবের চোখ খুব একটা খারাপ না। আরতো সেদিন ডাক্তার দেখিয়ে চশমার পাওয়ার এডজাষ্ট করে এসেছেন। চোখে ছানিও নেই। কি দেখছেন আর কি দেখছেন না ভালোই বোঝেন বারেক সাহেব। তিনি হলফ করে বলতে পারেন টিস্যুতে চোখ মোছার সময় তিনি ভদ্রলোকের চোখে কোন পানি দেখেননি।
চেনেননি বঙ্গবন্ধু। চেনেননি ধুর্ত এরশাদ সাহেবও। চিনছেন কি দলীয় প্রধান? ভাবেন বারেক সাহেব।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন