বিজ্ঞাপন

বিষাদের বিউগল শুনিয়েছিল অস্তাচলের আলোকপুরী

July 8, 2019 | 6:20 am

বিজ্ঞাপন

দিনের আলোয় বার্মিংহামকে দেখে যে কেউ ধাক্কা খাবেন। ১৮১ বছরের পুরোনো ভবন ও স্থানীয়দের নির্লিপ্ত চলাফেরা দেখে আপনার মনে হবে, এত নিষ্প্রাণ শহর গোটা যুক্তরাজ্যে বোধহয় আর দুটো নেই। কিন্তু এই ধারণাটি পাল্টে যাবে সূর্যাস্তের পরই। দিনের আলো মিইয়ে যেতেই আপনি প্রবেশ করবেন কল্পিত কোন জগতে। এ যেন আলোকপুরী! রাত যত বাড়ে, ততোই যৌবনা হয়ে ওঠে দিনের আলোয় বৃদ্ধ শহরটি!

বিখ্যাত সড়ক কিংবা সিটি সেন্টার তো বটেই, অখ্যাত কোন সড়কও ঝলমলে আলোয় প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। দিনের সেই নির্লিপ্ত মানুষগুলোও রাতে হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত! খাবারের দোকান ও পানশালায় গভীর রাত অব্দি চলে তাদের অবিরত আড্ডা। গোটা বার্মিংহাম পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে।

শহরটির ঐহিত্যের প্রশংসা না করে উপায় নেই। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, গির্জা, সরকারি বেসরকারি ভবন, স্কুল, ইউনিভার্সিটি, দোকানপাট, পাব, পার্ক সব কিছুতেই কেমন বিশালতা আর পুরোনো দিনের ছোঁয়া। অবশ্য গোটা বৃটেনই এমন। তবে বার্মিংহামকে তুলনামূলক বেশিই মনে হল যেন, এমনকি লন্ডনের চাইতেও।

বিজ্ঞাপন

ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ এর অন্য আট-দশটি শহরের মত অল্পস্বল্প পরিসরে এরা যেন কোন কিছুই ভাবতে পারেনা। বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় চেইন ফাস্ট ফুড শপ ম্যাকডোনাল্ডস দিয়েই উদারণটি দেয়া যাক। লন্ডন কিংবা কার্ডিফে ম্যাকডোনাল্ডস যেটুকু আয়তনের মধ্যে দাঁড়ানো, তার চাইতে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি আয়তন এখানকার এক একটি ম্যাকডোনাল্ডস শপের।

এই শহরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাও বেশ স্বস্তির। জনসংখ্যার দিক থেকে লন্ডনের পরেই ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি। কিন্তু জীবনযাপন ও চলাফেরা এতটুকুও ঘিঞ্জি নয়। রাস্তায় বের হলে দেখবেন মানুষের কমতি নেই, কিন্তু লন্ডনের মত কারো গায়ের সাথে গা লেগে যায় না।

বিজ্ঞাপন

সেই সুযোগও অবশ্য নেই। কেননা বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও রাস্তাগুলো এতটাই প্রকান্ড, যা আপনাকে একান্তই নিজের মতো করে চলাফেরার সুযোগ করে দিবে।

বার্মিংহামের প্রাকৃতিক পরিবেশও দারুণ মনোরম। ঘন গাছপালা শহরটিকে সবুজে ভরে রেখেছে। শহরের যে প্রান্তেই আপনি যান না কেন, সবুজের কোন কমতি দেখবেন না। শহর থেকে সাবআর্ব কিংবা কান্ট্রিসাইডের দিকে গেলে মনে হবে, আপনি গভীর কোন অরণ্যে চলে এসেছেন বুঝি!

মধ্যযুগের ছোট একটি মার্কেট শহর বার্মিংহাম। কিন্তু আজ তার কী রূপান্তর! ছোট সেই শহরটির আজকের এই রূপান্তরের পেছনে চালকের ভূমিকা পালন করেছে অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লব। মূলত তারপর থেকেই তথ্য প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে বৃটেনের অন্য আট-দশটি শহরকে ছাঁপিয়ে গেছে বার্মিংহাম।

বিজ্ঞাপন

বার্মিংহাম বিশেষত প্রস্তুতকারক শিল্পের জন্যই বিশ্বব্যাপী বেশি পরিচিত। ১৭৯১ সালে বিশ্বের প্রথম প্রস্তুতকারক শিল্প শহর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বৃটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটি। এই শহরে বসেই জেমস ওয়াট আবিষ্কার করেছেন বাষ্পীয় ইঞ্জিন। তাঁর জীবনের ৪৪টি বছর কেটেছে বার্মিংহামের ছায়া সুশীতল এই শহরে।

শুধু জেমস ওয়াট কেন?  অক্সিজেনের আবিষ্কারক জোসেফ প্রিসলিও এই বার্মিংহামেই কাটিয়েছেন জীবনের এক দশকের বেশি সময় (১৭৮০-১৭৯১)।

ইংল্যান্ডের অন্যতম আধুনিক ক্রিকেট ভেন্যুটিও কিন্তু এখানে। এজবাস্টন রোডের পাশে গড়ে ওঠায় নাম দেওয়া হয়েছে এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯৯৪ সালে এই মাঠেই ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে অপরাজিত ৫০১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসটি খেলেছিলেন।

আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মহাকাব্য লিখেছেন নাইট উপাধি পাওয়া সাবেক ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুক। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ২৯৪ সালের মহাকাব্যিক ইনিংসটি খেলেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। যার উপর ভর করে ধোনিদের এক ইনিংস ও ২৪২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

এজবাস্টনের ১৩৭ বছরের জন্মের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক  ক্রিকেটের যে কোন ফরম্যাটে এটিই কোন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। বার্মিংহামের এই ভেন্যুটি এই দুই ব্যাটসম্যানকে দু’হাত ভরে দিয়েছে, সেকথা অনায়াসেই বলা যায়।

জেমস ওয়াট, জোসেফ প্রিসলি, অ্যালিস্টার কুক, ব্রায়ান লারাদের শহরে বিশ্বকাপ কভার করতে এসে সময়টি নিতান্ত মন্দ কাটেনি। তবে শেষটা ছিল বিষাদে ভরা। গেল ২ জুলাই ধোনি, কোহলিদের ভারতের কাছে ২৮ রানে হেরে এখানেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটেছে। তাতে অলক্ষ্যে বিষাদের বিউগল বেজে উঠেছিল ইংল্যান্ডের অস্তাচলের এই আলোকপুরীতে। আবহে ছিল চাপা গোঙানি। কিন্তু আর্তনাদের চিৎকার ছিল না। কান্নার কাঁপন ছিল হৃদয়ের গহীনে। কিন্তু অশ্রুর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ছিল না। বর্ষার দিনে এখানেই থেমে গেছে মাশরাফিদের বসন্ত দিনের গান।

বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র‍্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।

আরও পড়ুন: ক্যারিয়ার সেরা রেটিং নিয়ে এগিয়েছেন সাকিব

সারাবাংলা/এমআরএফ/ওএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন