বিজ্ঞাপন

জলজট আর উন্নয়নের গর্তে ‘অচল’ বিমানবন্দর সড়ক, দুর্ভোগে যাত্রীরা

July 9, 2019 | 3:22 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিমুখী দু’টি সড়ক। পুলিশ জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিতে পানি জমে এবং উন্নয়নকাজের জন্য খোঁড়া গর্তের কারণে সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে এই অচলাবস্থা। দুই সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পরিস্থিতি এমন, এক কিলোমিটার পার হতেই সময় লাগছে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এতে এসব পয়েন্টের দুইপাশে শত, শত গাড়ির জট তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই অবস্থায় গত দু’দিন ধরে সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে না পারা অনেক যাত্রীকে রেখেই ফ্লাইট চলে গেছে গন্তব্যে। বিমানযাত্রীদের দুর্ভোগ তো আছেই, ওই এলাকায় কারখানা-অফিসে কর্মরতরাও পড়েছেন ব্যাপক ভোগান্তিতে।

রোববার (০৭ জুলাই) রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সোমবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে নগরীর কয়েকটি সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যেসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলছিল, পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে সেগুলোর গতি শ্লথ হয়ে যায়। এতে পুরো নগরজুড়েই যানজট সৃষ্টি হয়। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি নেমে গেলেও বিমানবন্দর সড়কের কয়েকটি অংশে জমে থাকা পানি সরছে না।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরী থেকে দু’টি সড়ক ধরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্টের দিকে, আরেকটি কাটগড়-পতেঙ্গা হয়ে বিমানবন্দর।

নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, রুবি সিমেন্টের সামনের সড়কটির একাংশ সোমবার সকাল আনুমানিক ৯টা থেকে এখনো (মঙ্গলবার দুপুর) পর্যন্ত কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে। সেই সড়ক দিয়ে অটোরিকশা, টেম্পু, প্রাইভেট কারসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ আছে। বাস-ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চললেও গতি খুবই সীমিত। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন ট্রাফিক কর্মকর্তারা।

এছাড়া পতেঙ্গা থানার সামনে দিয়ে কাটগড় সড়কটিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের এক-তৃতীয়াংশ দখলে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ। প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেসব গর্তের ওপর পানি জমে আছে। সেই সড়ক দিয়েও ছোট যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ আছে। বড় বড় গাড়িগুলোকে পানির নিচে গর্তে পড়ে যাতে দুর্ঘটনার শিকার হতে না হয়, সেজন্য ট্রাফিক পুলিশকে সতর্কতার সঙ্গে এলাকা পার করে দিতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (বন্দর) তারেক আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রুবি সিমেন্টের সামনে কোমর সমান পানি। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত। গাড়ি যাবে কিভাবে ? পানি জমে থাকা একেকটি অংশ পার হতে আধাঘণ্টার ওপর সময় লাগছে। এক কিলোমিটার পর হতে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।’

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা আরও জানান, একই এলাকায় পোর্ট কানেকটিং সড়কেও উন্নয়ন কাজ চলছে। ওই সড়কেও কমপক্ষে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৪-৫টি পয়েন্টে জমে আছে পানি। ওই সড়ক দিয়ে ছোট-বড় গাড়ি চললেও গতি খুবই শ্লথ। এতে পোর্ট কানেকটিংসহ আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বিমানযাত্রীদের অনেকেই পড়েছেন মারাত্মক ভোগান্তিতে। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির চট্টগ্রামে এসেছিলেন অফিসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে। সোমবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে তাঁর চট্টগ্রাম ছাড়ার কথা ছিল। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে নগরীর নাসিরাবাদে বিএনপিএস’র কার্যালয় থেকে বের হয়ে তিনি শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছান রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ততক্ষণে ফ্লাইটটি চলে গেছে। তিনি বিমানবন্দর থেকে আবারও নগরীতে হোটেলে ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

এসব তথ্য জানিয়ে বিএনপিএস, চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১১টায় ইউএস বাংলার ফ্লাইটে আমাদের নির্বাহী পরিচালক মহোদয় ঢাকায় গেছেন। বিমানবন্দরে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য তিনি নগরীর জিইসি মোড়ের হোটেল থেকে রওনা দেন সকাল ৭টায়। তিন ঘণ্টা ১০ মিনিট পর সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এই ধরনের অবরুদ্ধ পরিস্থিতি চট্টগ্রাম শহরে আমরা আগে দেখিনি।’

যানজটে পড়ে সোমবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ঢাকাগামী নভো এয়ারের ফ্লাইট ধরতে পারেননি সংস্কৃতিকর্মী সেলিম রেজা সাগর। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাল (সোমবার) ভোর থেকেই তো প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। আমি ভোর সাড়ে ৬টায় জিইসি মোড় থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিই। কিন্তু পানির কারণে গাড়ি ঠিকমতো চলতে পারেনি। যানজটে পড়ে যাই। সকাল সোয়া ৯টায় বিমানবন্দরে পৌঁছে আরেকটি ফ্লাইটে আমি ঢাকায় যাই। এসময় ইউএস বাংলা ফ্লাইটের ৮-৯ জন এবং নভো এয়ারের ৭ জন যাত্রীকে আমি এয়ারপোর্টে পেয়েছি, যারা ফ্লাইট মিস করেছেন।’

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা রাস্তায় অবস্থান করেও বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। তিনি সারাবাংলাকে জানান, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মঙ্গলবার সাড়ে ১০টার ঢাকামুখী ফ্লাইটের জন্য তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর লালখান বাজারের বাসা থেকে বের হন। সকাল ১১টায় তিনি বন্দরটিলায় পৌঁছান। কিন্তু সাড়ে ১০টায় রিজেন্টের ফ্লাইট শাহ আমানত বিমানবন্দর ত্যাগ করে। খবর পাবার পর তিনি বন্দরটিলা থেকে ফিরে আসেন।

দৈনিক কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাশেদুল তুষারের হালিশহরের বাসা থেকে বিমানবন্দরে যেতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। স্বাভাবিক সময়ে লাগে সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট। রাশেদুল তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড পার হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট। এমন যানজট যে, গাড়ি একেবারে নড়ে না। এরপর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্টের দিকে এবং কাটগড়ের দিকে রাস্তার ওপর পানি। গাড়ি চলে না। এক অসহনীয় পরিস্থিতি ! সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দরে পৌঁছাই। ভাগ্য ভালো, ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন