বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: বর্বরোচিত নৃশংসতার দেড় দশক

August 21, 2019 | 12:41 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আজ ২১ আগস্ট। এদিন ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিনের ১৫তম বার্ষিকী পালন করবে জাতি। দেড় দশক আগের এই দিনে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে। শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে চালানো সেই হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। তবে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীসহ আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের অনেকেই এখনো শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই পারেননি।

বিজ্ঞাপন

শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। দলীয় নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো পুরোপুরি শ্রবণশক্তি ফিরে পাননি তিনি।

আরও পড়ুন- শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন শেখ হাসিনা

বিশ্লেষকরা বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। আর সেই লক্ষ্য পূরণে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নীলনকশায় সংঘটিত হয় গ্রেনেড হামলা। এরপর পুলিশ-প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা পালন করে সেসময়। এই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটকও সাজানো হয়। ওই সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতসহ চার দলীয় জোটের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তাতেই প্রকাশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

২১ আগস্টের সেই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডেকেছিল আওয়ামী লীগ। সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য যখন শেষ, ঠিক সেই সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। সমাবেশস্থল আচমকা পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখা যায়, এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে রক্তাক্ত সব দেহ। দিনের আলো মুছে গিয়ে তৈরি হয় এক ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ। ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন সেদিন।

মেয়র হানিফের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান সেদিন।

আরও পড়ুন- ‘২১ আগস্ট হাঁটার শক্তি কেড়ে নিয়েছে, তবু রাজনীতি ছাড়িনি’

বিজ্ঞাপন

বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় অন্য নিহতরা হলেন— প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।

মারাত্মক আহতদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রায়ত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক।

শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে থাকা শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ গোটা জাতিই এই ঘৃণ্য হামলার বিচারের দিকে চেয়েছিল। হামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর গত বছরের ১০ অক্টোবর তাদের সেই প্রতীক্ষার খানিকটা অবসান ঘটে। সেদিন বিচারিক আদালত হামলার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত।

রায় ঘোষণার পর বিচারিক আদালতও পর্যবেক্ষণে বলেন, গ্রেনেড হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস। রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস এ হামলা ঘটানো হয়েছিল। কিন্তু রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

বিচারিক আদালতে এই মামলার রায় হলেও এখনো বিচারিক প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি। এমনকি এই মামলার পেপারবুকই এখনো তৈরি হয়নি। কবে নাগাদ এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হতে পারে, সেটিও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই ভয়াল দিনটিকে তাই জাতি গ্রেনেড হামলা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিবসটি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিনের কর্মসূচির মধ্যে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। বিকেল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/কেকে

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন