বিজ্ঞাপন

ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ ডাকসু নেতার, হলের সিট ছেড়ে থাকছেন গণরুমে

September 2, 2019 | 9:52 pm

ঢাবি করেসন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন সংকট নিরসন এবং গণরুম সমস্যার সমাধানে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত গণরুমে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করবেন বলেও সারাবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ডাকসু নির্বাচনের প্রায় ছয় মাসেও গণরুম সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। এর প্রতিবাদে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘোষণা দিয়ে নিজের বৈধ সিট ছেড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণরুমে থাকা শুরু করেন সৈকত।

ছাত্রলীগের ব্যানার থেকে নির্বাচিত ডাকসুর এ সদস্য বলেন, ‘ডাকসুর নির্বাচনে সবগুলো ইশতেহারের বড় জায়গা জুড়ে গণরুম সমস্যা সমাধান নিয়ে কথা ছিল। আমি নিজেও গণরুম সমস্যা সমাধানের কথা বলে ভোট চেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এতদিনে গণরুম সমস্যার কোনো সমাধানে পথ তৈরি করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও করেনি। আমি আমার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা, নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে এ কাজটি করেছি। দৃশ্যমান কোনো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমার এই কর্মসূচি চলতে থাকবে।’

গণরুমে শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবনযাপনের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের আরাম-আয়েশের জীবনযাপন এবং তাদের জন্য একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণের প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন সৈকত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বহুতল ভবন হয়, সেগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় তো শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়। শিক্ষার্থীরা একটা বড় ব্যাপার। সেখানে ছাত্ররা মানবেতর জীবনযাপন করছেন আর শিক্ষকরা এসি রুমে বসে আছে। এ বৈষম্য কেন? এটি আমরা জানতে চাই। শিক্ষার্থীদের গণরুমের সংকটপূর্ণ সমস্যা সমাধান না করে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক দেব এবং বহুতল ভবনগুলো দখল করতে পারি আমরা।’

গতকাল রাতে গণরুমে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে সৈকত বলেন, ‘আমি গতকাল গণরুমে থেকেছি। কোনোভাবেই গণরুম বাস করার যোগ্য নয়। গণরুমে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন ছাত্ররা। গতকাল ছারপোকার কামড়ের জন্য সারারাত ঘুমুতে পারিনি। আর কাল বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও প্রচণ্ড গরম ছিল। এরা কীভাবে ঘুমুচ্ছে, এরা কতটা কষ্ট পাচ্ছে আমি সেটা বুঝতে পেরেছি।’

সৈকত বলেন, ‘আমি তো ডাকসুর সদস্য। ডাকসুর এজেন্ডা নির্ধারণ করেন ভিপি, জিএস ও এজিএস। সদস্য হয়েও আমি আমার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। আমার প্রতিবাদের মাধ্যমেই হয়ত এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান আসবে বলে আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে গণরুম সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও এতদিন পর্যন্ত ডাকসুর অন্য নেতৃবৃন্দ কেন এ সমস্যা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এটা তার কাছে বোধগম্য নয় বলে সারাবাংলাকে জানান সৈকত।

এই সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রশাসন ও ডাকসু মিলে যৌথ উদ্যোগে সমাধান করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আরও আগেই এই সমস্যার সমাধান করা উচিত ছিল। ডাকসু নির্বাচনের পাঁচ মাসের ওপরে সময় হয়েছে। আরও আগেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’

এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সৈকতের এই প্রতিবাদটি প্রশংসনীয়। কিন্তু ভিপি আর একজন সদস্য প্রতিবাদ করলে তো হবে না। প্রশাসন ও ডাকসুর অন্য নেতাদের উচিৎ এ সব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ডাকসুরে বেশিরভাগ পদেই জিতিয়ে দেয়। তারাই গেস্টরুম ও গণরুমের মাধ্যমে ছাত্রদের জিম্মি রেখে তাদের রাজনীতি করছে। তাই প্রশাসন ও ছাত্রলীগের যেসব নেতৃবৃন্দ ডাকসুতে দায়িত্বশীল তাদের উচিত এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া।’

বিজ্ঞাপন

প্রশাসন ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ কোনো পদক্ষেপ না নিলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হলে এসব সমস্যার সমাধান দ্রুত করা সম্ভব বলে মনে করেন ভিপি নুর। আর ডাকসু সদস্য সৈকত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক ও নৈকিত আন্দোলন সব সময় পাশে থাকবেন বলেও জানান নুর।

এসব বিষয়ে জানতে ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ডাকসু সদস্য তানভির হাসান সৈকত কবি জসীমউদ্দিন হলের ৩২০ নং কক্ষ বরাদ্দ পাওয়া। ডাকসু নির্বাচনের পর  তিনি প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে দ্বৈতভাবে তার সিটে থাকতেন। রোববার রাতে হলের ২০৮ নং কক্ষে গণরুমে এসে আরেকজন শিক্ষার্থীকে তার সিটে থাকতে পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানান।

সারাবাংলা/কেকে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন