বিজ্ঞাপন

আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়

September 30, 2019 | 12:39 pm

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ

টলিউডের মিস্টার ইন্ডাস্ট্রিখ্যাত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। ১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া দুই বাংলার এই জনপ্রিয় অভিনেতা পা রাখেলেন ৫৮ বছরে। গত ৩৫ বছর ধরে তিনি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তার সমসাময়িক অনেক অভিনেতা যেখানে বয়সের কাছে হার মেনে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করছেন, সেখানে এখনো নায়কের চরিত্রে দেখা মেলে তার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাফল্যের দৌঁড়ে তিনি সবার থেকে এগিয়ে। যা অনুপ্রেরণা জোগায় এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীদের।

বিজ্ঞাপন

জন্মদিনের ক্ষণে সারাবাংলা ডট নেটের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন বুম্বা দা তথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ে। কথায় কথায় তিনি তার জন্মদিনের উপলব্ধি, যাপিত জীবন, চিরসবুজ থাকার রহস্য আর ক্যারিয়ার নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।


জীবনের ৫৭ বছর পেরিয়ে ৫৮ বছরে। ধাপে ধাপে বার্ধক্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। মৃত্যু চিন্তা কি উঁকি দেয় কখনো?
অত সহজে মরছি না (হা হা হা)। মৃত্যু চিন্তা নিশ্চয়ই হয়। জন্মেছি যখন মরে যেতে হবে একদিন না একদিন। তবে মৃত্যুর আগে ভালো ভালো কিছু কাজ করে যেতে চাই, যা আমাকে বাংলার মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে। এই যেমন জীবিত অবস্থায় আপনি আমাকে মনে করে ফোন করলেন। মরে গেলেও যেন আমাকে মনে রাখেন সেই কাজ তো করে যেতে হবে।

আপনি যেসব কাজ ইতিমধ্যে করেছেন সেসব কী যথেষ্ট নয়?
আমার প্রচন্ড ক্ষুধা। ভালো ভালো কাজের ক্ষুধা। সেই ক্ষুধা সহজে মেটে না। বেঁচে যতদিন আছি কাজ করে যাবো। আমি আমার বায়োপিকে বলেছি, শুটিং চলাকালীন অবস্থায় যেন যমদূত এসে হাজির হন।

বিজ্ঞাপন

আপনার কাছে জীবনের মানে?
আমার কাছে জীবন মানে বেঁচে থাকা। আর বেঁচে থাকা মানে ভালো কাজে সময় ব্যয় করা। জীবনকে ভালোবাসতে হবে। তবে ভালোবেসে হেসে খেলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। জন্মের পর মানুষ অনেক দায়িত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠে। সেই দায়িত্ব উপলব্ধি করে কাজ করার মাধ্যমে জীবন অর্থবহ করে তোলা উচিত। এই ধরুন, আমি মনে করি বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব পালন করতে না পারলে মরে শান্তি পাব না।

৫৭ বছরে চিরসবুজ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

৫৮ বছরেও চিরসবুজ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে কোনো আক্ষেপ?
নাহ। আমি কখনো কোনো বিষয় নিয়ে আক্ষেপ করি না। যা পেয়েছি জীবনে তাতেই খুশি থাকার চেষ্টা করি। আক্ষেপ মানসিকভাবে পিছিয়ে দেয়।

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান পদ থেকে আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। এখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন কেউ কেউ। কী বলবেন?
জন্মদিন বা ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন চালিয়ে যাওয়াটা ভালো মনে করি। এটা নিয়ে আর মন্তব্য না করা ভালো। আপনি বরং গুমনামী বাবা নিয়ে প্রশ্ন করুন। ওটা পূজোয় মুক্তি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আমার প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক…
আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না। আমি সিনেমার মানুষ। ঠিক কি কারণে আমাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো জানি না! তবে আমি আমার কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছিলাম না। যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। রাজ চক্রবর্তী চেয়ারম্যান হয়েছে। ওর জন্য আমার আশীর্বাদ থাকবে সবসময়। নতুন নেতৃত্ব আসাটা ইতিবাচক।

এ প্রজন্মের জনপ্রিয় দুই নায়ক জিৎ ও সোহমের সাথে এক ফ্রেমে প্রসেনজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

এ প্রজন্মের জনপ্রিয় দুই নায়ক জিৎ ও সোহমের সাথে এক ফ্রেমে প্রসেনজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

আপনার অভিনীত সৃজিত মুখার্জীর ছবি ‘গুমনামী বাবা’ পূজোয় মুক্তি পাচ্ছে। ছবিতে আপনাকে নেতাজি সুভাস বসুর চরিত্রে দেখা যাবে। এমন একটি চরিত্রে অভিনয় কতটা চাপের?
চাপ তো অবশ্যই। নেতাজির চরিত্রে অভিনয় চাট্টিখানি কথা নয়। নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে গিয়ে নেতাজির চরিত্রে অভিনয় করেছি। প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সবশেষ ঠিকমত কাজটি শেষ হয়েছে।

এটা নিয়ে তো বিতর্ক হচ্ছে…
বিতর্কের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা ছবির কাজ শুরু করেছিলাম। তবে সব বিতর্ক কাটিয়ে সেন্সর বোর্ড ছবিটিতে ছাড়পত্র দিয়েছে। যারা এখনো বিতর্ক করছেন তাদের উচিত আগে ছবিটি দেখা।

প্রসেনজিৎকে টালিগঞ্জে সবাই বুম্বা দা নামে ডাকেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রসেনজিৎকে টালিগঞ্জে সবাই ‘বুম্বা দা’ নামে ডাকেন। ছবি: সংগৃহীত

টালিগঞ্জে কথিত আছে, আপনি যার মাথার উপর হাত রাখেন তার পেছন ফিরে তাকাতে হয় না…
কঠিন প্রশ্ন আমার জন্য। কেউ কারও জীবন বদলে দিতে পারে না। নিজেকেই নিজের জীবন বদলাতে হয়। নতুনরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে ভরসার জায়গা খোঁজে। আমি আমার জায়গা থেকে কেবল নিজের সাধ্যমত সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দেই। ব্যাস।

বিজ্ঞাপন

শেষ প্রশ্নে একটি রহস্য জানতে চাই। আপনার সমসাময়িক অনেক অভিনেতা যেখানে এখন বাবার চরিত্রে অভিনয় করছেন সেখানে আপনি মুখ্য চরিত্রের অভিনেতা। এই চিরসবুজ থাকার রহস্য কী?
কোনো রহস্য নেই। আমি জানি আমাকে কি করতে হবে! আমি সিনেমার মানুষ। সিনেমায় টিকে থাকতে হলে নিজেকে ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে হয়—এটা আমি বিশ্বাস করি। আর সেভাবে অধ্যাবসায় ও সাধনা করি। জিম করি, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবার খাই। কারণ আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন