বিজ্ঞাপন

বিচার চাইতে মরদেহ নিয়ে ডিআরইউতে স্বজনরা

October 23, 2019 | 1:43 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: থানায় মামলা না নেওয়ার কারণে বিচার পাওয়ার আশায় প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) হাজির হয়েছিলেন স্বজনরা। মরদেহের সঙ্গে থাকা আত্মীয়রা কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, স্যার, আপনারা এই হত্যার বিচার করেন। আমরা বিচার চাই। থানায় মামলা নেয়নি। থানা পুলিশ হত্যাকারীর পক্ষে কথা বলছে। অবশ্য পুলিশ পরে জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষার কারণেই তারা তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নেননি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ইয়ানু পাখি (২৮) বেগম নামের এক নারীর মরদেহ নিয়ে হাজির হন তার স্বজনরা। স্বজনদের মধ্যে ছিলেন পাখির মা-বাবা, বোন, বোনের স্বামী, খালাত বোনসহ আরও বেশ কয়েকজন।

পাখির স্বজনরা বলেন, এখানে বিচার চাইতে এসেছি। পাখিকে তারা হত্যার পর মরদেহের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে। পায়ের নিচে কোনো তুল বা চেয়ার কিছুই ছিল না। ফ্যান আস্তে আস্তে ঘুরছিল। দরজা খোলা ছিল। পুলিশ এসে কিছু না শুনেই বলে দিলো, নেশা করার পর পাখি আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন স্বজনরা।

খালাত বোন সোনিয়া বলেন, পাখির আগে একটি সংসার ছিল। ওই সংসারে ১১ বছরের একটি সন্তান আছে। তার নাম ঝর্ণা। ৮ বছর আগে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। এরপর মা-বাবার সঙ্গে শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে থাকত পাখি। ৫/৬ মাস আগে জানতে পারি, রাজারবাগের উত্তরদিকে গ্রিনলাইন পরিবহনের পাশের এক ভবন মালিকের ছেলে রাজীবের (৩৫) সঙ্গে পাখির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

পাখির ছোট বোন মরিয়ম বলেন, এক সপ্তাহ আগে পাখি রাজীবের বাসায় ওঠে। বিয়ে করার কথা বলে রাজীব তাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিল। পরে পাঁচ-ছয় দিন আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে আমাকে ফোন করে বলে, বইন, তুই কি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে পারবি? আমি দুই দিন থেকে না খেয়ে আছি। কী খাবি— জানতে চাইলে বলে, খিচুড়ি খাব। তখন খিচুড়ি নিয়ে রাজীবের ওই বাসার তিন তলায় যাই।

মরিয়ম বলেন, পাখি খাবার খেতে খেতেই রাজীব ছয় তলা থেকে নামে। রাজীব আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে, এটা কে? বোন পরিচয় দিলে সে বলে, কেন তাকে এখানে ডেকেছিস? এরপর আমাকে আমার কোলের বাচ্চাসহ পাশের একটি রুমে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। অনেক চিৎকার করলেও কেউ রুম খুলে দেয়নি। এক পর্যায়ে আমি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়ি। মাগরিবের আজানের সময় দরজা খুলে দিয়ে রাজীব আমাকে ডেকে বলে, তোমার বোন তো গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে দেখি, বোন আমার গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঘুরছে। দরজাও খোলা আছে। রাজীব আমাকে বলে, তোমার বোন বেঁচে আছে, ওকে সিএনজি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমি একটি সিএনজি নিয়ে এসে দেখি, রাজীব নেই। দারোয়ান বলে, রাজীব বের হয়ে গেছে। এরপর দারোয়ান থানায় ফোন করলে পুলিশ আসে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।

রাজীব সম্পর্কে জানতে চাইলে মরিয়ম বলেন, মোমিনবাগের ১ নম্বর ভবনটি তাদের নিজের। তার মা-বাবা ওই ভবনের ছয় তলায় থাকেন। তিন তলায় রাজীব থাকে। রাজীব নেশা করায় তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী চলে গেছেন। তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়েছে বলে শুনেছি।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, মামলা নেওয়া হয়নি— সেটা ঠিক নয়। যেহেতু পাখিকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখা গেছে, তাই ময়নাতদন্তের আগে কিছু বলা যাবে না। সেটা আত্মীয়-স্বজনদেরও বলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এখন পরিবার এলে পুলিশ মামলা নেবে।

ওসি আরও বলেন, এরই মধ্যে অভিযুক্ত রাজীবকে আটক করা হয়েছে। তাকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। মামলা হলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। আগামীকাল (বুধবার) তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন