বিজ্ঞাপন

চসিক নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি, ইঙ্গিত ফখরুলের

February 11, 2020 | 6:35 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অতীতে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেইসঙ্গে তিনি আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফখরুল এ ইঙ্গিত দেন।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেকে আমাদের প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকরাও বলেন, আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন কেন? আমরা বলি, বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের অন্য কোনো পথ নেই, হওয়া উচিত নয়। সে কারণেই আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিই।’

‘আমরা অতীতে দুয়েকটা নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এটা ঠিক হয়নি। এরপর থেকে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা আমাদের দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা মনে করি, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’— বলেন ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। সেই সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আমরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে মনে করি।’

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে তাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা না থাকার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় রাষ্ট্রপতি আমাদের কথা শোনেননি। তিনি এমন সব লোকজন দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, যাদের কোনো যোগ্যতাই নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনলে মনে হয়, উনার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই। এমন ইভিএম চালু করেছেন, সিইসির নিজের আঙ্গুলের ছাপই মেলে না। এরা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে তামাশায় পরিণত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই রায় চূড়ান্ত রায় নয়, আপিল করা হয়েছে, সেজন্য তিনি এখনও জামিন পাওয়ার যোগ্য। এদেশে অনেক মন্ত্রী-এমপিরও সাজা হয়েছিল, কিন্তু মন্ত্রিত্ব টিকে ছিল। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীরেরও সাজা হয়েছিল। এমনকি ইয়াবা সম্রাট বদিরও সাজা হয়েছিল। তারা জামিন পেয়েছেন অথচ বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের একটাই ভয়, যদি খালেদা জিয়া মুক্তি পান, তাহলে এই অন্যায়ভাবে হত্যা-নির্যাতন করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবে না, লুটপাট করতে পারবে না। কিন্তু এদেশের জনগণ কখনোই এই অন্যায় মেনে নেবে না। এদের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়াবে।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করে, মামলা দিয়ে জেলে পুরে, গুম করে দেশপ্রেমিক মানুষকে সরকার দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আজ সরকারের অবস্থা কি হয়েছে? একটা নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। সরকার নিজের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য যখন যে যা-ই হুকুম দিচ্ছে, সেটাই মেনে নিচ্ছে। আমাদের সীমান্তে ভারত প্রতিদিন মানুষ হত্যা করে, সরকারের প্রতিবাদ করার সাহস হয় না। আমরা নদীতে পানি পাই না, সরকার ভারতের কাছ থেকে পানি আনতে পারে না।’

দেশের অর্থনীতি স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। এটা আমার কথা নয়, স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর কথা। প্রতিবছর ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর এই সরকার ভ্যাটের জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন করছে। সারাদেশ আজ লুটপাটের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালে মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নাম পাল্টে নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি রাখা দরকার। এই আওয়ামী লীগ এখন সত্যিই লুটপাট সমিতিতে পরিণত হয়েছে।’

জাতীয় সংসদকে একদলীয় সংসদ আখ্যা দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতেও শপথ না নেওয়া এই নেতা বলেন, ‘এমন সংসদ, জাতীয় পার্টি নাকি বিরোধীদল। এমন বিরোধীদল, ঢাকা দক্ষিণে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ভোট পেয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তারা এদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।’

বিজ্ঞাপন

সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে বন্দুকের জোরে, এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সবসময় বলে বিএনপি নাই, বিএনপির কোনো শক্তি নাই। আরে বিএনপির যদি শক্তি না-ই থাকে, তাহলে বিএনপির বিরুদ্ধে এত কথা বলেন কেন? এমন একটা দিন নেই, এমন একটা ক্ষণ নাই, এমন একটা বক্তৃতা নাই, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলে না। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, বিএনপিই হচ্ছে সরকারের জন্য একটা বড় সমস্যা।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেক হাইব্রিড নেতা, মন্ত্রী-এমপি আছে। এই চট্টগ্রামেও একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আছেন, যিনি অনেক বড় বড় কথা বলেন, খুব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও কথা বলেন। আরে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কি আপনার জন্ম হয়েছিল?’

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যারা বিএনপি করেন, অঙ্গ সংগঠন করেন, কখনোই হতাশ হবেন না। আমরা জানি, আপনাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, প্রতিনিয়ত নির্যাতন হচ্ছে, প্রচণ্ডভাবে নির্যাতন হচ্ছে, খুন করছে, গুম করছে। তারপরও আপনারা কিন্তু মাথা নোয়াননি। হার স্বীকার করেননি। সেজন্যই বলছি, হতাশা কখনো আপনাদের আসল জায়গায় পৌঁছে দেবে না। বিএনপির দিকে মানুষ আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।’

মতবিনিময় সভার কথা বলা হলেও চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশের আদলে কর্মসূচির আয়োজন করে নগর বিএনপি। এতে নগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে এই কর্মসূচিতে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন।

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠে মাদক-সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ আমরা দেখেছি। সরকারি দলের নেতাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, নিজ দলের সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিদের ধরছেন না কেন? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন আবারও গায়েবি মামলা দিয়ে ভোট ডাকাতির এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

আবু সুফিয়ান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। কিন্তু নির্বাচন এলেই কিছু চিহ্নিত লোক, যারা দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না, তারা নেতাদের পেছনে নমিনেশনের জন্য ঘুরঘুর করে। যারা বিভিন্নসময় দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নমিনেশন না দিয়ে পরীক্ষীত নেতাদের দেওয়ার অনুরোধ করছি।’

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু কিছু নেতা সহজ পথে সহজ জয়ের আশায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন। নিজের দলের কর্মসূচিতে আসার সময় পান না, অন্য দলের মিটিংয়ে ব্যানার নিয়ে যান। আমরা সবকিছু দেখছি। শুধু বলতে চাই, এটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল। এই দলের সঙ্গে বেইমানি করে কেউ পার পাবে না। দলের পতাকা, দলের আদর্শ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’

এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তবে তারা কোনো খানকাহ শরীফে হাজিরা দেওয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো ভাইয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন