বিজ্ঞাপন

প্রতিকূলতার মধ্যেও হুয়াওয়ের আয় বেড়েছে ১৯.১ শতাংশ

March 31, 2020 | 8:54 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিষেধাজ্ঞাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গেলো বছর প্রায় ১৯ দশমিক ১ শতাংশ আয় বেড়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের। গতবছরে বিশ্বব্যাপী কোম্পানিটির আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮৫৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন চীনা ইউয়ান) যা আগের বছরের চেয়ে যা প্রায় ১৯ দশমিক ১শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) চীনের শেনঝেন শহরে ২০১৯ সালের ব্যবসার নিজস্ব ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের স্ববিস্তার বিবরণ সংবলিত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের মোট লাভের পরিমাণ প্রায় ৬২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউয়ান (৮.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছুঁয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া পরিচালন কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ লেনদেনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউয়ানে (১২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ২২ দশমিক ৪ বেশি। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণার লক্ষ্যে চলমান কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ২০১৯ সালে অর্জিত রাজস্বের প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হুয়াওয়ে বিনিয়োগ করেছে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ১৩১ ধমমিক ৭ বিলিয়ন ইউয়ান (১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমান। এই নিয়ে গত এক দশকে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় করা মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়ালো।

‘২০১৯ সাল হুয়াওয়ের জন্য অসাধারণ একটি বছর ছিলো’ মন্তব্য করে হুয়াওয়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরিক যু বলেন, ‘বাইরের নানান চাপ থাকা সত্ত্বেও আমাদের কর্মীরা কেবল গ্রাহকদের জন্য ভালোমানের নতুন পণ্য ও সেবা তৈরির প্রতিই অধিক মনোযোগ দিয়েছে। তাদের শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জনে আমরা এবং সারাবিশ্বে আমাদের অন্যান্য অংশীদারেরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। ফলে ব্যবসাও ভালো হয়েছে।’

২০১৯ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার ব্যবসা ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিয়ে ছে। ফাইভ-জির অধিকতর বাণিজ্যিক গ্রহণ এবং এর অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে নতুন উদ্ভাবন বাড়াতে কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যান্য ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে মিলে সম্মিলিতভাবে ফাইভ-জি উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। হুয়াওয়ের রুরালস্টার বেজ স্টেশন সমাধানগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেটওয়ার্ক সমস্যারও কার্যকর সমাধান করতে পারে। এই সমাধানগুলো বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সারাবিশ্বের চার কোটিরও বেশি মানুষের কাছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার ব্যবসার বিক্রয় আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৯৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউয়ানে (৪২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় যা প্রায় তিন দশমিক আট শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল বিশ্বের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করার লক্ষ্যে হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসা শিল্পখাতগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরে গ্রাহকদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। বিশ্বব্যাপী ৭ শ’টিরও বেশি শহর এবং ২২৮ ফরচুন গ্লোবাল ৫ শ কোম্পানি হুয়াওয়েকে তাদের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশীদার হিসাবে বেছে নিয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে নিজস্ব কম্পিউটিং কৌশল ঘোষণা করেছে হুয়াওয়ে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে, কোম্পানিটি বিশ্বের দ্রুততম এআই প্রসেসর ‘অ্যাসেন্ড ৯১০’ এবং এআই প্রশিক্ষণ ক্লাস্টার ‘অ্যাটলাস ৯০০’ চালু করে। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের এন্টারপ্রাইজ ব্যবসা থেকে বিক্রয় আয় প্রায় ৮৯ দশমিক সাত বিলিয়ন ইউয়ান (১২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছুঁয়েছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় আট দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

গ্রাহক ব্যবসায় বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রেখেছে হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটি বছরব্যাপী মোট প্রায় ২৪ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ট্যাবলেট, পরিধানযোগ্য যন্ত্র, স্মার্ট স্ক্রিনসহ সব ধরনের যন্ত্রে নির্বিঘ্ন এআই জীবন পরিমণ্ডল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অধিকতর অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে হুয়াওয়ের গ্রাহক ব্যবসা থেকে বিক্রয় আয় চীনা ইয়েনের হিসেবে প্রায় ৪৬৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৬৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি।

’এগিয়ে যাওয়ার পথে বাইরের পরিবেশটা কেবল আরও জটিল হবে’-সতর্ক করেন এরিক যু। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পণ্য ও সেবার মানবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া উন্মুক্ত উদ্ভাবনের প্রসারের পাশাপাশি গ্রাহক ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আরও ভালো কিছু উপহার দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শিল্পখাতের ডিজিটাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরের ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগানোর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখার এটাই একমাত্র উপায়।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অঞ্চলভিত্তিক আয়ের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে চীনে। দেশটির বাজার থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৭২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অন্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল। এ অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ২৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অন্য বছরের তুলনায় ০.৭ শতাংশ বেশি। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে গতবছর আয় হয়েছে ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্য বছরের তুলনায় এটি ১৩.৯ শতাংশ বেশি, বছরভিত্তিক আয় বৃদ্ধির হারে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (চীন প্রথম)। এছাড়া গতবছর আমেরিকা অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর্থিক হিসেবে যা অন্য বছরের চেয়ে ৯.৬ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

হুয়াওয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯-এর যাবতীয় অর্থনৈতিক বিবৃতি নিরীক্ষণ করেছে কেপিএমজি, যেটি আন্তর্জাতিবক পর্যায়ের বড় চারটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মের একটি।

সারাবাংলা/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন