বিজ্ঞাপন

করোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন

April 2, 2020 | 8:47 am

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কারাবন্দিদের সর্বোচ্চ নিরাপদ আটক নিশ্চিত করাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় আবাসিক ও দাফতরিক সুবিধা দিতে জামালপুরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য ‘জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক বন্ধ থাকায় প্রকল্পের অনুমোদন পিছিয়ে যাচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তথ্যপ্রযুক্তির সন্নিবেশন, কারাবন্দিদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ আটক নিশ্চিতকরণ এবং কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একক ও পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি রয়েছে। এছাড়া শেষ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি কোনো দিকে যাবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। এ কারণে জানা যাচ্ছে না, একনেকের পরবর্তী বৈঠকের তারিখ। তবে ছুটি শেষ হলেই নিয়মিত একনেক হবে। আর একনেক হলেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধুমাত্র জামালপুর কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প নয়, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এমনকি একনেকের জন্য প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তৈরির কাজও শেষ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একেনেকের পরবর্তী বৈঠকে এগুলো উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর গতবছরের ৪ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এখন এটি একনেক সভায় উপস্থাপনের চূড়ান্ত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমান একনেক বন্ধ থাকায় প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ একনেক অনুষ্ঠিত হবে সেটি এখনও কেউ বলতে পারছে না। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের কারণে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় তার ওপর। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কারা অধিদফতর এবং গণপূর্ত অধিদফতর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জামালপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা কারাগারটি ১৮৯৯ সালে উপ-কারাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে জেলা কারাগারে উন্নীত হয়। কারা অভ্যন্তরে ৪ দশমিক ১৮ একর এবং বাইরে ১০ দশমিক ৫৮ একরসহ কারাগারটির মোট জমির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৭৬ একর। আর কারাগারটির অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩৪ জন, যেখানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১২১ জন। এছাড়া কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩০৭ জন। কিন্তু এর বিপরীতে বর্তমানে আটক বন্দির সংখ্যা ৬৬১ জন। ১২১ বছর আগে নির্মিত কারাগারটির অধিকাংশ ভবন জরার্জীর্ণ এবং ব্যবহার অযোগ্য। বর্তমানে বন্দিদের গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটক রাখতে হচ্ছে। মহিলা বন্দিদের থাকার জায়গার অভাবে তাদেরকে নিকটস্থ শেরপুর জেলা কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। ফলে আদালতে হাজিরার জন্য আনা নেওয়ায় প্রশাসনিক সমস্যাসহ নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানায়, বন্দিদের পরিচ্ছন্নতা ও শৌচকাজের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাব, দুর্ধর্ষ প্রকৃতির বন্দিদের আটক রাখার সেলের অভাব, স্পর্শকাতর বা জঙ্গি বন্দিদের আটক রাখার সুযোগ না থাকা, অসুস্থ বন্দিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ায় অসুবিধা, বন্দিদের বৃত্তিমূলক কার্যক্রম ও খেলাধুলার স্থান না থাকা এবং মানসম্পন্ন খাদ্য গুদামের অভাবে কারাগারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থাও জরাজীর্ণ এবং নিম্নমানের। এজন্য কারগারের বিদ্যমান জমিতে প্রয়োজনীয় ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কারাবন্দিদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কারাগার নির্মাণসহ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আবাসিক ও দাফতরিক সুবিধাদি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য গত ২ মার্চ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

বিজ্ঞাপন

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন