বিজ্ঞাপন

দেশে লুটেরা অর্থনীতি চালু করেছে সরকার: ফখরুল

August 19, 2020 | 11:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার দেশে লুটেরা অর্থনীতি চালু করেছে বলে অভিযোগ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে দুইটা দুযোর্গ চলছে— একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ  বা কোভিড-১৯ দুর্যোগ, অন্যটি রাজনৈতিক দুর্যোগ। কোভিডে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আর রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে এ দেশে মানুষের মালিকানা বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। তারা (সরকার) দেশে লুটেরা অর্থনীতি কায়েম করেছে।’

বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে সংযুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকেল শুরু হওয়া এই ভার্চুয়াল আলোচনা শেষ হয় রাত ৯টায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এতে অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, দেশনেত্রীকে মুক্ত করা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং এখানে লক্ষ মানুষ যারা মামলা-মোকাদ্দমায় জড়িত হয়ে পড়ে আছে, যারা কারাগারে রয়েছে, তাদের মুক্ত করা এখন জরুরি। এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, এটা সমগ্র দেশের, সমগ্র মানুষের।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপি তার ভূমিকা এরই মধ্যে পালন করছে। স্বেচ্ছাসেবক এই ভূমিকা বিএনপি অতীতেও পালন করেছে এবং এখনো করছে। আমাদের এখন সময়ে এসেছে ঐক্য সৃষ্টি করার।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের যেই চেতনা ছিল, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে যারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের লক্ষ্য ছিল— একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে, একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা হবে এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। কিন্তু জনগণ দেখেছে ১৯৭২ সাল থেকে মানুষের মুক্তি বদলে আরো আবদ্ধ হয়েছে, ক্রীতদাস হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মানুষ মুক্তি তো পায়ইনি, তারা আরও নির্যাতিত হয়েছে বেশি করে। আমরা সেই সময়ে দেখেছি— এই আওয়ামী লীগ সেদিন শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেসব স্বপ্নগুলোকে চূরমার করে দিয়ে প্রথমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছিল এবং সবশেষে ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছিল।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে হরণ করবার জন্য, মানুষের অধিকারকে হরণ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ১/১১-এর পর থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে এবং দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে।’

স্থায়ী মিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শহিদ জিয়া বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এজন্য যে এসব সংগঠন দলের ভ্যানগার্ড হিসেব কাজ করবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। মানুষ সত্য কথা বলতে পারছে না। সত্য আজকে মিথ্যার কাছে ধামাচাপা পড়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যে লড়াই-সংগ্রাম চলছে, তাতে আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করার প্রস্ততি নিতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ দুইটি ভাইরাসে আক্রান্ত— একটি করোনাভাইরাস, আরেকটি আওয়ামী লীগ ভাইরাস। আওয়ামী ভাইরাসে আমাদের দেশের রাজনীতি গত ১১ বছর আক্রান্ত। এই ভাইরাস আমাদেরকে জর্জরিত করেছে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, মামলার সংখ্যা এক লাখের ওপরে।’

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির খবরটা কোথায়? শুধু মুখে, শুধু পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে। সেই রাজনীতিটা কী? শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার, শুধু জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র  রায় বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে এখন কিছু কথাবার্তা নতুন করে আসছে। কেউ বলছেন জিয়াউর রহমান তাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দিয়েছিলেন এবং তিনি প্রত্যাখান করার কারণে তাকে জেলে নেওয়া হয়েছিল। যিনি বলেছেন, তার বয়স তখন ৩৩/৩৪-এর বেশি হবে না। আর সেই সময়ে তিনি কোনো প্রখ্যাত নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিতও ছিলেন না।’

‘সেখানে প্রখ্যাত নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান, জুনাব আলী তালুকদার, মোমেন তালুকদার। এদের মতো প্রসিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা থাকতে তাদের খোঁজ-খবর না নিয়ে, জিল্লুর রহমানের মতো নেতার খোঁজখবর না নিয়ে তাকে মন্ত্রিসভায় আহ্বান করেছেন, এটা একান্তই একটা ভুতুড়ে গল্প,’— বলেন গয়েশ্বচন্দ্র রায়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরুউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক ফজলুল হক মিলন ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন