বিজ্ঞাপন

‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে সীমান্ত হত্যায় প্ররোচিত হচ্ছে বিএসএফ’

December 20, 2020 | 4:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মন্ত্রীদের ‘বিভ্রান্তিমূলক’ প্রচারে সীমান্ত হত্যায় প্ররোচিত হচ্ছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)—এমনটিই অভিযোগ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন ‘বন্ধনের সোনালি অধ্যায়’ রচনা করতে ভার্চুয়াল আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তখন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি নিরীহ দরিদ্র যুবক জাহিদুল ইসলামের লাশ পড়েছিল কাঁটাতারের নিচে। অথচ সামিট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বললেন, ‘সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ওদের গুলি করে।’

‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে কেউ যদি বিএসএফের গুলি খেয়ে মারা যায়, তার দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না’— খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষদেরকে হত্যা করারই ন্যায্যতা দান করছে। এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। সুতরাং সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ সরকার এড়াতে পারে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নতজানু মিডনাইট অটো সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী নন, তারা অন্য কোনো দেশের প্রতিনিধি। বর্তমান আওয়ামী সরকারে হরেক কিসিমের ক্রীতদাস ও মোসাহেবে পরিপূর্ণ। বাস্তবে এই সরকারের হাতে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির মৃত্যু ঘটেছে। তারা শুধুমাত্র অবৈধভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভূদের তোষামোদীতেই ব্যাস্ত।’

রিজভী বলেন, ‘২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিলো বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর লাশ। সেই বর্বর দৃশ্য আজও দেশের মানুষকে ব্যথিত করে। প্রতিটি দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশের জনগণ আশা করেছিল, ফেলানী হত্যার বিচার হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেই।’

আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যমতে, এই সরকারের গত ১২ বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বাংলাদেশীকে সীমান্তে হত্যা করেছে বিএসএফ। এই করোনার মধ্যেও গত এক বছরে প্রতিবেশি দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ৪৫ জন বাংলাদেশি। এছাড়া সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড ও নদীতে প্রায়ই বাংলাদেশির রহস্যজনক লাশ পাওয়ার ঘটনা খবরে আসে’— বলেন রিজভী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্ডার গার্ডের তরফ থেকে পতাকা বৈঠক করে লাশ গ্রহণ ছাড়া ভরসা রাখার মতো কোনো তৎপরতাই এখন চোখে পড়ে না। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকতে পারে। ভোটারবিহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে রক্তাক্ত সীমান্ত এখন বাংলাদেশের সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা এখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি ভয়ঙ্কর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘তামাম দুনিয়ায় এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার নজীর নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেই এর সমর্থন নেই। সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ, যারা এসব ঘটাচ্ছে, তারা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। বিএসএফ আত্মরক্ষার কথা বললেও অস্ত্র হাতে কোনো বাংলাদেশি মারা যাওয়ার নজির নেই। অথবা এ বিষয়ে ভারত কখনোই অভিযোগ করেনি বাংলাদেশের নিকট। কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হোক। গুলি করে মারার এখতিয়ার কারও নেই। বিএসএফ এর বিতর্কিত শ্যুট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বহাল আছে, যার প্রেক্ষিতে বিএসএফ বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করতে পারে।

সারাবাংলা/এজেড/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন