বিজ্ঞাপন

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামাতে রাতে যৌথ টহল— একমত বিজিবি-বিএসএফ

December 25, 2020 | 8:04 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে রাতের বেলা যৌথ টহল পরিচালনা করার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানো এবং যথার্থ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়াসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণেও দুই বাহিনী সম্মত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলন থেকে শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) পাঠানো এক যৌথ প্রেস বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামীকাল শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতের গৌহাটিতে চলমান এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে দৃঢ় আশাবাদ জানান। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালক আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বিএসএফ মহাপরিচালককে। তিনি সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফের সমন্বিত যৌথ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিজ্ঞাপন

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক ও দুর্বৃত্তদের হাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ জানান। এসময় সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আরও কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রাতের বেলা যৌথ টহল পরিচালনার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা, যথার্থ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও এক হয় বিজিবি-বিএসএফ।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের প্রশংসা করে। তাদের প্রত্যাশা— বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

সীমান্তে হত্যার ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিএসএফ মহাপরিচালক আশ্বাস দেন। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্ত নিরাপত্তায় একযোগে কাজ করার বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, যেমন— মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য, বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জাল মুদ্রা, সোনা প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ জানান। এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে দুই দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা দুই দেশের জন্যই বিপদজনক। এ বিষয়ে চোরাকারবারিদের তথ্য বিনিময় এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে দুই পক্ষ সম্মত হয়।

প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সদস্যদের প্রায়ই বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশের বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানান বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। দুই পক্ষ অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম বা সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়।

এর আগে, গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নিরীহ পথের অনুরোধ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিজিবি মহাপরিচালক এ বিষয়টি বিএসএফ মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞাপন

বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। আস্তানাগুলো ধ্বংস করার অনুরোধ করেন তিনি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওই সব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সম্মেলনে বিজিবি ও বিএসএফ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়। উভয় পক্ষই একে অন্যকে অবগত না করে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে সম্মতি একমত হয়। বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক সম্মেলনের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্টি জানান। তারা দু’জনেই সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

আগামী ২০২১ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আয়োজনের বিষয়েও একমত হয় দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন