বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ থেকে সুখবরের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

January 11, 2021 | 9:57 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতিসংঘ থেকে সুখবর আসার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। তার আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত (ইউএনসিডিপি) কমিটির মূল্যায়নে বাংলাদেশকে পাস করতে হবে। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) ইউএনসিডিপি দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে বসবে এবং মূল্যায়ন প্রতিবেদন ঘোষণা করবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এবারের মূল্যায়নেও বাংলাদেশ পাস করবে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা কমে যাবে। তাই এখন থেকেই বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউএনসিডিপির ১২ জানুয়ারির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে সুখবর পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘ যে সূচকগুলো বেধে দিয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ ভালো করেছে। করোনা অতিমারিতেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা যেভাবে ধরে রেখেছে তা প্রশংসনীয়। এর আগে ২০১৮ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশ সবগুলো সূচকেই ইতিবাচক ফল অর্জন করেছিল।

ইউএনসিডিপির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবিষয়ক বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী জুয়েনা আজিজ। এদিকে ইউএনসিডিপির যে কমিটি মূল্যায়ন করবে, সেই কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক যে অগ্রযাত্রা এবং করোনার মধ্যেও ব্যক্তি আয়সহ অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে আমরা যে উন্নতি করেছি তাতে এবারের মূল্যায়নেও বাংলাদেশ পাস করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে যখন বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে তখন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমরা এখন এলডিসি হওয়াতে যে সুবিধাগুলো পাচ্ছি সেগুলো আর থাকবে না। তাই এলডিসি পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি হবে। তখন আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হতে হবে। ফলে সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে। ২০২৭ সালের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করতে হলে আমাদের ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু ভিয়েতনাম তখনো বিনা শুল্কে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করবে। ফলে আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য আমাদের সব খাতে সংস্কার আনতে হবে, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমাতে হবে।’

এসব বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে নতুন করে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে কূটনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কূটনীতি নির্ধারণ করতে হবে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার সময় যে ধরনের অর্থনীতি বা স্বাস্থ্যনীতি ছিল, এখন কিন্তু সেগুলো আর নেই। ফলে নতুন ধরনের নীতি লাগবে, নতুন কূটনীতিও লাগবে। আবার সবধরনের কূটনীতির মধ্যে একটা চেইন থাকতে হবে। আগেকার সময়ে কূটনীতি ছিল রাজার জন্য, বড়জোড় রাষ্ট্রের জন্য। কিন্তু এখন জনগণের জন্য কূটনীতি করতে হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলডিসি পরবর্তী সময়কে মোকাবিলা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাজ করছে। পাশাাশি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। দেশের সবগুলো মিশনকে এসব বিষয়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেগুলো নিয়েও নীতি নির্ধারণ চলছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলায় এরই মধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থনীতি কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি বিশ্বের কোন অঞ্চলে আমাদের কী সুযোগ রয়েছে এবং সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের দূতদের এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূতরাও তাদের পরিকল্পনা জানিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন