বিজ্ঞাপন

দিনে বাসে জটলা বানিয়ে, রাতে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই

February 12, 2021 | 1:27 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে আট সদস্যের একটি ছিনতাইকারী চক্র পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা দিনে গণপরিবহনে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে এবং সন্ধ্যার পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করত। এই চক্রের সদস্যরা বেতনভুক্ত কর্মচারির মতো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার শেখ মুজিব রোড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

গ্রেফতার আটজন হল- তাজুল ইসলাম তাজু (৩৬), তুষার হোসেন (২৫), মো. তপু (২২), হায়াত মাহমুদ জীবন (২৩), আনোয়ার হোসেন বাবু (২১), নাজমুল ইসলাম (২৮), আব্দুর রহমান রানা (২০) এবং জনি শাহ (৩২)।

গ্রেফতার আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি মহসীন সারাবাংলাকে জানান, এই চক্রের সদস্যরা দিনে গণপরিবহনে বিশেষ করে বিভিন্ন রুটের সিটিবাসে উঠে ছিনতাই করে। সেক্ষেত্রে তারা পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে এবং বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে। শ্রেণিগুলো হচ্ছে- মহাজন, ঠেকবাজ, মিস্ত্রি, জমাদার এবং পাসম্যান। তারা একসঙ্গে বাসে ওঠে। ৩-৪ জন ঠেকবাজের দায়িত্ব পালন করে টার্গেট করা যাত্রীকে ঘিরে জটলা তৈরি করে। একজন মিস্ত্রি জটলার মধ্যে দ্রুত মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে পাসম্যানের কাছে দিয়ে দেয়। পাসম্যান সেটা জমাদারের কাছে দেয় এবং জমাদার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়।

বিজ্ঞাপন

‘এসময় যাত্রী যদি বুঝতে পারেন যে তার মোবাইল-মানিব্যাগ নেই, তখন যদি তিনি চিৎকার করেন, তাকে ঘিরে যারা জটলা তৈরি করেছে, তারাও ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগ দেয়। উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। কাছাকাছি কোথাও নিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। বাধ্য হয়ে ওই যাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে যান। এটা গণপরিবহনে তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল। আর সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা সংঘবদ্ধভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। রিকশা-অটোরিকশার যাত্রী কিংবা পথচারীকে টার্গেট করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে। চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট থেকে একেবারে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলাকা ঘুরে তারা ছিনতাই করে’— বলেন ওসি মহসীন।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি আরও জানান, জমাদার ছিনতাই করা মোবাইল-টাকা মহাজনের কাছে হস্তান্তর করেন। মহাজন সেটা বিক্রি করে টাকা নগদ করে। প্রত্যেক সদস্য দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা মহাজনের কাছ থেকে বেতন নেয়। ছিনতাই করতে পারলেও এ মজুরি তারা পায়, ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হলেও পায়।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার আটজনের মধ্যে তুষার মহাজনের দায়িত্ব পালন করে। তাজুল ও রানা মিস্ত্রির দায়িত্বে থাকে। নাজমুল জমাদার এবং বাকিরা ঠেকবাজ হিসেবে ছিনতাইয়ে ভূমিকা রাখে। মহাজন তুষার মোবাইল বিক্রির জন্য দেয় নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন জুয়েলকে (২৬)। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হলেও আব্বাস পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে ওসি জানিয়েছেন।

ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, চক্রের দলনেতা হলেন তাজুল। প্রায় দেড়যুগ ধরে সে চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাই করে আসছে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে কমপক্ষে ২০টি। গ্রেফতারও হয়েছে প্রায় ২০বার। বারবার জামিনে বেরিয়ে সে ছিনতাইকারী চক্র গড়ে তোলে। গ্রেফতার হওয়া বাকি সবার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫টি করে ছিনতাইয়ের মামলা আছে।

গ্রেফতার ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে ১টি এলজি ও ১টি কার্তুজ, ৩টি ছোরাসহ ছিনতাইয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ৮টি ছিনতাই করা মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসআই অর্ণব বড়ুয়া।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন