বিজ্ঞাপন

যেকোনো মাসের চেয়েও বেশি মৃত্যু এপ্রিলের ১৮ দিনেই

April 18, 2021 | 11:09 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ১০২ জন। দেশে ৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ মৃত্যুর তথ্য। ১৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে প্রথম মৃত্যুর সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। এরপরে মাস হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী মারা যায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে মৃত্যু হয় এক হাজার ২৬৪ জনের। তবে ২০২১ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৮ দিনের মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সেই রেকর্ড। এই ১৮ দিনে মারা গেছে এক হাজার ৩৩৯ জন। এর আগে এত কম সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়নি।

বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিকভাবেই গত এই দুই সপ্তাহ সময়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যেই একদিনে সর্বোচ্চ ১০২ জনের মৃত্যু ঘটে ১৮ এপ্রিল। আর এই সময়ের মধ্যে কোনোদিনই মৃত্যু ৫০-এর নিচে নামেনি। সর্বনিম্ন ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত ২ এপ্রিল। ৫০-এর ঘরে মৃত্যু ছিল আরও চার দিন। মৃত্যু ষাটের ঘরে ছিল চার দিন, সত্তরের ঘরে তিন দিন। একদিন আশির ঘরে এবং ১৬ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শতাধিক মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার (১৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এর মাধ্যমেই এপ্রিল মাসে প্রথম ১৮ দিনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা হলো এক হাজার ৩৩৯ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় এই ১০২ জনের মৃত্যু একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুরও রেকর্ড।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ১৮ মার্চ। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ১০ হাজার ৩৮৫ জন মারা গেলেন এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে। দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছে যে পাঁচ দিনে, তার সবগুলো এই এপ্রিলেরই।

১৮ দিনে এক হাজার ৩৩৯ জনের মৃত্যু

দেশে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই মার্চ মাসে দেশে মোট পাঁচ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ১৬৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। মে মাসে মারা যান এক হাজার ১৯৭ জন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে দেশে এক হাজার ২৬৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। এটিই ছিল ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিলের আগে মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের আগস্ট মাসে দেশে এক হাজার ১৭০ জন মারা যান। সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মারা যান ৯৭০ জন। অক্টোবর মাসে দেশে ৬৭২ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। নভেম্বর মাসে দেশে ৭২১ জন ও ডিসেম্বর মাসে মারা যান ৯১৫ জন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৬৮ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮১ জনের মৃত্যু হয় কোভিডে। মার্চে ৬৩৮ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। আর ২০২১ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৮ দিনে মারা গেছেন এক হাজার ৩৩৯ জন।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু যে পাঁচ দিনে

২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল: এদিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১০২ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এটিই। ১৬ ও ১৭ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ১০১ জন করে। এটিই ছিল দেশে ১০০ এর উপরে মারা যাওয়ার সংখ্যা। যা এখন পর্যন্ত যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছে। এছাড়া ১৪ এপ্রিল একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১৫ এপ্রিল মারা যান ৯৪ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে চতুর্থ স্থানে। আর ১২ এপ্রিল ৮৩ জনের মৃত্যু রয়েছে তালিকায় পঞ্চম স্থানে।

এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী

বিজ্ঞাপন

চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে প্রায় মাসখানেক হলো। তবে এই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে সংক্রমণের বিপরীতে মৃত্যুর হার কিন্তু এই সময়ে বরং কমেছে। গত ১৫ দিনের হিসাবই যদি ধরা হয়, শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার ১ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি। আর এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণে গড় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফলে এটা বলা যায়, সংক্রমণের পরিমাণ যত বাড়বে, মৃত্যুও তত বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেই বয়স্ক মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক এবং এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে বরং মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিধিনিষেধ থাকুক না থাকুক, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি ফের মনে করিয়ে দিলেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন দেওয়া হোক, লকডাউন দেওয়া হোক বা আর যাই কিছু করা হোক না কেন— যে বা যারা মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, তাদের কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। আবার তারা নিজেরা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও কম থাকবে। প্রত্যেককেই যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করানো সম্ভব হয়, তাহলেই কেবল সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন